পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৪
মহাভারত

১৮। দীর্ঘতমা—ধৃতরাষ্ট্র, পাণ্ডু ও বিদুরের জন্ম—অণীমাণ্ডব্য

 পুত্রশোকার্তা সত্যবতী তাঁর দুই বধূকে সান্ত্বনা দিয়ে ভীষ্মকে বললেন, রাজা শান্তনুর পিণ্ড কীর্তি ও বংশ রক্ষার ভার এখন তোমার উপর। তুমি ধর্মের তত্ত্ব ও কুলাচার সবই জান, এখন আমার আদেশে বংশরক্ষার জন্য দুই ভ্রাতৃবধূর গর্ভে সন্তান উৎপাদন কর, অথবা স্বয়ং রাজ্যে অভিষিক্ত হও এবং বিবাহ কর, পিতৃপুরুষগণকে নরকে নিমগ্ন ক’রো না।

 ভীষ্ম বললেন, মাতা, আমি ত্রিলোকের সমস্তই ত্যাগ করতে পারি কিন্তু যে সত্যপ্রতিজ্ঞা করেছি তা ভঙ্গ করতে পারি না। শান্তনুর বংশ যাতে রক্ষা হয় তার ক্ষত্রধর্মসম্মত উপায় বলছি শুনুন। পুরাকালে জামদগ্ন্য পরশুরাম কর্তৃক পৃথিবী নিঃক্ষত্রিয় হ’লে ক্ষত্রিয়নারীগণ বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণের সহবাসে সন্তান উৎপাদন করেছিলেন, কারণ বেদে বলা আছে যে, ক্ষেত্রজ পুত্র বিবাহকারীরই পুত্র হয়। উতথ্য ঋষির পত্নী মমতা যখন গর্ভিণী ছিলেন তখন তাঁর দেবর বৃহস্পতি সংগম প্রার্থনা করেন। মমতার নিষেধ না শুনে বৃহস্পতি বলপ্রয়োগে উদ্যত হলেন, তখন গর্ভস্থ শিশু তার পা দিয়ে পিতৃব্যের চেষ্টা ব্যর্থ করলে। বৃহস্পতি শিশুকে শাপ দিলেন, তুমি অন্ধ হবে। ঊতথ্যের পুত্র অন্ধ হয়ে জন্মগ্রহণ করলেন, তাঁর নাম হ’ল দীর্ঘতমা। তিনি ধার্মিক ও বেদজ্ঞ ছিলেন, কিন্তু গোধর্ম[১] অবলম্বন করায় প্রতিবেশী মুনিগণ ক্রুদ্ধ হয়ে তাঁকে ত্যাগ করলেন। দীর্ঘতমার পুত্রেরা মাতার আদেশে পিতাকে ভেলায় চড়িয়ে গঙ্গায় ভাসিয়ে দিলেন। ধর্মাত্মা বলি রাজা তাঁকে দেখতে পেয়ে সন্তান উৎপাদনের জন্য নিয়ে গেলেন এবং মহিষী সুদেষ্ণাকে তাঁর কাছে যেতে বললেন। অন্ধ বৃদ্ধ দীর্ঘতমার কাছে সুদেষ্ণা নিজে গেলেন না, তাঁর ধাত্রীকন্যাকে পাঠালেন। সেই শূদ্রকন্যার গর্ভে কাক্ষীবান প্রভৃতি এগারজন ঋষি উৎপন্ন হন। তারপর রাজার নির্বন্ধে সুদেষ্ণা স্বয়ং গেলেন, দীর্ঘতমা তাঁর অঙ্গ স্পর্শ করে বললেন, তোমার পাঁচটি তেজস্বী পুত্র হবে—অঙ্গ বঙ্গ কলিঙ্গ পুণ্ড্র সুহ্ন, তাদের দেশও এই সকল নামে খ্যাত হবে। বলি রাজার বংশ এইরূপে মহর্ষি দীর্ঘতমা থেকে উৎপন্ন হয়েছিল।

 তারপর ভীষ্ম বললেন, মাতা, বিচিত্রবীর্যের পত্নীদের গর্ভে সন্তান উৎপাদনের জন্য আপনি কোনও গুণবান ব্রাহ্মণকে অর্থ দিয়ে নিয়োগ করুন। সত্যবতী হাস্য ক’রে লজ্জিতভাবে নিজের পূর্ব ইতিহাস জানালেন এবং পরিশেষে


  1. পশুর তুল্য যত্র তত্র সংগম।