পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৭১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৮৪
মহাভারত

অধিক এবং পাপ অল্প সে প্রথমে নরক ও পরে স্বর্গ ভোগ করে। তুমি দ্রোণকে অশ্বত্থামার মৃত্যুসংবাদ দিয়ে প্রতারিত করেছিলে, তাই আমি তোমাকে ছলক্রমে নরক দেখিয়েছি। তোমার ভ্রাতারা এবং দ্রৌপদীও ছলক্রমে নরকভোগ করেছেন। তোমার পক্ষে যে সকল রাজা নিহত হয়েছিলেন তাঁরা সকলেই স্বর্গে এসেছেন। যাঁর জন্য তুমি পরিতাপ কর সেই কর্ণও পরমসিদ্ধি লাভ করেছেন। তুমি পূর্বে কষ্টভোগ করেছ, এখন শোকশূন্য নিরাময় হয়ে আমার সঙ্গে বিহার কর। এই ত্রিলোকপাবনী দেবনদী আকাশগঙ্গায় স্নান ক’রে মানুষভাব থেকে মুক্ত হও।

 মূর্তিমান ধর্ম তাঁর পুত্র যুধিষ্ঠিরকে বললেন, বৎস, এই তৃতীয় বার তোমাকে আমি পরীক্ষা করেছি, তোমাকে বিচলিত করা অসাধ্য। তোমরা কেউ নরকভোগের যোগ্য নও, তুমি যা দেখেছ তা ইন্দ্রের মায়া। তার পর যুধিষ্ঠির আকাশগঙ্গায় স্নান ক’রে মনুষ্যদেহ ত্যাগ করলেন এবং দিব্য দেহ ধারণ ক’রে যেখানে পাণ্ডব ও ধার্তরাষ্ট্রগণ ক্রোধশূন্য হয়ে সুখে অবস্থান করছিলেন সেখানে গেলেন।

২। কুরুপাণ্ডবাদির স্বর্গলাভ

 যুধিষ্ঠির কুরুপাণ্ডবগণের নিকটে এসে দেখলেন, গোবিন্দ ব্রাহ্মী তনু ধারণ ক’রে দীপ্যমান হয়ে বিরাজ করছেন, তাঁর চক্র প্রভৃতি ঘোর অস্ত্রসমূহ পুরুষমূর্তিতে তাঁর নিকটে রয়েছে, অর্জুন তাঁকে উপাসনা করছেন। যুধিষ্ঠিরকে দেখে কৃষ্ণার্জুন যথাবিধি অভিবাদন করলেন। তার পর যুধিষ্ঠির অন্যান্য স্থানে গিয়ে দ্বাদশ আদিত্যের মধ্যে বীরশ্রেষ্ঠ কর্ণ, মরুদ্‌গণবেষ্টিত ভীমসেন, অশ্বিদ্বয়ের নিকটে নকুল-সহদেব, এবং সূর্যের ন্যায় প্রভাশালিনী কমল-উৎপলের মাল্যধারিণী পাঞ্চালীকে দেখলেন।

 ইন্দ্র বললেন, এই দ্রৌপদী অযোনিজা লক্ষ্মী, শূলপাণি তোমাদের প্রীতির নিমিত্ত এঁকে সৃষ্টি করেছিলেন। এই পাঁচ জন গন্ধর্ব তোমাদের পুত্ররূপে এঁর গর্ভে জন্মেছিলেন। এই গন্ধর্বরাজ ধৃতরাষ্ট্রকে দেখ, ইনিই তোমার জ্যেষ্ঠতাত ছিলেন। এই সূর্যতুল্য বীর তোমার অগ্রজ কর্ণ। বৃষ্ণি ও অন্ধক বংশীয় মহারথগণ, সাত্যকি প্রভৃতি ভোজবংশীয় বীরগণ, এবং সুভদ্রাপুত্র চন্দ্রকান্তি অভিমন্যু—এঁরা সকলেই দেবগণের মধ্যে রয়েছেন। এই দেখ তোমার পিতা পাণ্ডু ও মাতা কুন্তী-মাদ্রী, এঁরা বিমানযোগে সর্বদা আমার কাছে আসেন। বসুগণের মধ্যে ভীষ্ম এবং বৃহস্পতির