পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৭১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্বর্গারোহণপর্ব
৬৮৫

পার্শ্বে তোমার গুরু দ্রোণকে দেখ। অন্যান্য রাজা ও যোদ্ধারা গন্ধর্ব যক্ষ ও সাধুগণের সঙ্গে রয়েছেন।

 জনমেজয় প্রশ্ন করলেন, দ্বিজোত্তম, আপনি যাঁদের কথা বললেন তাঁরা কত কাল স্বর্গবাস করেছিলেন? কর্মফলভোগ শেষ হ’লে তাঁরা কোন্ গতি পেয়েছিলেন? বৈশম্পায়ন বললেন, অগাধবুদ্ধি সর্বজ্ঞ ব্যাসদেবের নিকট আমি যেমন শুনেছি তাই বলছি।—ভীষ্ম বসুগণে, দ্রোণ বৃহস্পতির শরীরে, কৃতবর্মা মরুদ্‌গণে, প্রদ্যুম্ন সনৎকুমারে, ধৃতরাষ্ট্র ও গান্ধারী কুবেরলোকে, পাণ্ডু কুন্তী ও মাদ্রী ইন্দ্রলোকে, এবং বিরাট দ্রুপদ ভুরিশ্রবা উগ্রসেন কংস অক্রূর বসুদেব শাম্ব প্রভৃতি বিশ্বদেবগণে প্রবেশ করেছেন। চন্দ্রপুত্র বর্চা অভিমন্যু রূপে জন্মেছিলেন, তিনি চন্দ্রলোকে গেছেন। কর্ণ সূর্যের, শকুনি দ্বাপরের, এবং ধৃষ্টদ্যুম্ন পাবকের শরীরে গেছেন। ধৃতরাষ্ট্রের পুত্রেরা রাক্ষসের অংশে জন্মেছিলেন, তাঁরা অস্ত্রাঘাতে পূত হয়ে স্বর্গলাভ করেছেন। বিদুর ও যুধিষ্ঠির ধর্মে লীন হয়েছেন। বলরামরূপী ভগবান অনন্তদেব রসাতলে প্রবেশ করেছেন। দেবদেব নারায়ণের অংশে যিনি জন্মেছিলেন সেই বাসুদেব নারায়ণের সহিত যুক্ত হয়েছেন। তাঁর ষোল হাজার পত্নী কালক্রমে সরস্বতী নদীতে প্রাণত্যাগ ক’রে অপ্সরার রূপে নারায়ণের কাছে গেছেন। ঘটোৎকচ প্রভৃতি দেবলোক ও রাক্ষসলোক লাভ করেছেন। কর্মফলভোগ শেষ হ’লে এঁদের অনেকে সংসারে প্রত্যাবর্তন করবেন।


 রাজা জনমেজয় বৈশম্পায়নের মুখে মহাভারতকথা শুনে অতিশয় বিস্মিত হলেন। তাঁর যজ্ঞ সমাপ্ত হ’ল, সর্পগণের মুক্তিতে আস্তীক মুনি প্রীত হলেন। ব্রাহ্মণগণ দক্ষিণা পেয়ে তুষ্ট হয়ে চ’লে গেলেন, নিমন্ত্রিত রাজারাও প্রস্থান করলেন। তার পর জনমেজয় যজ্ঞস্থান তক্ষশিলা থেকে হস্তিনাপুরে ফিরে গেলেন।

৩। মহাভারত-মাহাত্ম্য

 নৈমিষারণ্যের দ্বিজগণকে সৌতি বললেন, আপনাদের আদেশে আমি পবিত্র মহাভারতকথা কীর্তন করেছি। ভগবান কৃষ্ণদ্বৈপায়ন-রচিত এই ইতিহাস তাঁর শিষ্য বৈশম্পায়ন কর্তৃক জনমেজয়ের সর্পযজ্ঞে কথিত হয়েছিল। যিনি পর্বে পর্বে এই গ্রন্থ পাঠ ক’রে শোনান তিনি পাপমুক্ত হয়ে ব্রহ্মলাভ করেন। যিনি সমাহিত হয়ে এই