পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আদিপর্ব
৪৭

পরায়ণ হলেন। ধৃতরাষ্ট্র জন্মান্ধ, বিদুর শূদ্রার গর্ভজাত, একারণে পাণ্ডুই রাজপদ পেলেন।

 বিদুরের সঙ্গে পরামর্শ ক’রে ভীষ্ম গান্ধাররাজ সুবলের কন্যা গান্ধারীর সঙ্গে ধৃতরাষ্ট্রের বিবাহ দিলেন। অন্ধ পতিকে অতিক্রম করবেন না—এই প্রতিজ্ঞা ক’রে পতিব্রতা গান্ধারী বস্ত্রখণ্ড ভাঁজ ক’রে চোখের উপর বাঁধলেন।

 বসুদেবের পিতা যদুশ্রেষ্ঠ শূরের পৃথা[১] নামে একটি কন্যা ছিল। শূর তাঁর পিতৃষ্বসার পুত্র নিঃসন্তান কুন্তিভোজকে সেই কন্যা দান করেন। পালক পিতার নাম অনুসারে পৃথার অপর নাম কুন্তী হ’ল। একদা ঋষি দুর্বাসা অতিথি রূপে গৃহে এলে কুন্তী তাঁর পরিচর্যা করলেন, তাতে দুর্বাসা তুষ্ট হ’য়ে একটি মন্ত্র শিখিয়ে বললেন, এই মন্ত্র দ্বারা তুমি যে যে দেবতাকে আহ্বান করবে তাঁদের প্রসাদে তোমার পুত্রলাভ হবে। কৌতূহলবশে কুন্তী সূর্যকে ডাকলেন। সূর্য আবির্ভূত হয়ে বললেন, অসিতনয়না, তুমি কি চাও? দুর্বাসার বরের কথা জানিয়ে কুন্তী নতমস্তকে ক্ষমা চাইলেন। সূর্য বললেন, তোমার আহ্বান বৃথা হবে না, আমার সঙ্গে মিলনের ফলে তুমি পুত্র লাভ করবে এবং কুমারীই থাকবে। কুন্তীর একটি দেবকুমার তুল্য পত্র হ’ল। এই পুত্র স্বাভাবিক কবচ (বর্ম) ও কুণ্ডল ধারণ ক’রে ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন, ইনিই পরে কর্ণ নামে খ্যাত হন। কলঙ্কের ভয়ে কুন্তী তাঁর পুত্রকে একটি পাত্রে রেখে জলে ভাসিয়ে দিলেন। সূতবংশীয় অধিরথ ও তাঁর পত্নী রাধা সেই বালককে দেখতে পেয়ে ঘরে নিয়ে গেলেন এবং বসুষেণ নাম দিয়ে পুত্রবৎ পালন করলেন। কর্ণ বড় হয়ে সকল প্রকার অস্ত্রের প্রয়োগ শিখলেন। তিনি প্রতিদিন মধ্যাহ্ণকাল পর্যন্ত সূর্যের উপাসনা করতেন। একদিন ব্রাহ্মণবেশী ইন্দ্র কর্ণের কাছে এসে তাঁর কবচ[২] প্রার্থনা করলেন। কর্ণ নিজের দেহ থেকে কবচটি কেটে দিলে ইন্দ্র তাঁকে শক্তি অস্ত্র দান ক’রে বললেন, তুমি যার উপর এই অস্ত্র ক্ষেপণ করবে সে মরবে, কিন্তু একজন নিহত হ’লেই অস্ত্রটি আমার কাছে ফিরে আসবে। কবচ কেটে দেওয়ার জন্য বসুষেণের নাম কর্ণ ও বৈকর্তন হয়।

 রাজা কুন্তিভোজ তাঁর পালিতা কন্যার বিবাহের জন্য স্বয়ংবরসভা আহ্বান করলে কুন্তী নরশ্রেষ্ঠ পাণ্ডুর গলায় বরমাল্য দিলেন। পাণ্ডুর আর একটি বিবাহ

  1. ইনি কৃষ্ণের পিসী।
  2. কর্ণের কবচ-কুণ্ডল-দানের কথা বনপর্ব ৫৬-পরিচ্ছেদে বিবৃত হয়েছে।