পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৮
মহাভারত

দেবার ইচ্ছায় ভীষ্ম মদ্রদেশের রাজা বাহ্লীকবংশীয় শল্যের কাছে গিয়ে তাঁর ভগিনীকে প্রার্থনা করলেন। শল্য বললেন, আমাদের বংশের একটি নিয়ম নিশ্চয় আপনার জানা আছে। ভালই হ’ক বা মন্দই হ’ক আমি কুলধর্ম— লঙ্ঘন করতে পারি না। ভীষ্ম উত্তর দিলেন, কুলধর্ম পালনে কোনও দোষ নেই। এই ব’লে তিনি স্বর্ণ রত্ন গজ অশ্ব প্রভৃতি ধন বিবাহের পণ রূপে শল্যকে দিলেন। শল্য প্রীত হয়ে তাঁর ভগিনী মাদ্রীকে দান করলেন, ভীষ্ম সেই কন্যাকে হস্তিনাপুরে এনে পাণ্ডুর সঙ্গে বিবাহ দিলেন। দেবক রাজার শূদ্রা পত্নীর গর্ভে ব্রাহ্মণ কর্তৃক একটি কন্যা উৎপাদিত হয়েছিল, তাঁর সঙ্গে বিদ্যুরের বিবাহ হ’ল।

 কিছুকাল পরে মহারাজ পাণ্ডু সসৈন্যে নির্গত হয়ে নানা দেশ জয় ক’রে বহু ধন নিয়ে স্বরাজ্যে ফিরে এলেন এবং ধৃতরাষ্ট্রের অনুমতিক্রমে সেই সমস্ত ধন ভীষ্ম, দুই মাতা ও বিদুরকে উপহার দিলেন। তারপর তিনি দুই পত্নীর সঙ্গে বনে গিয়ে মৃগয়া করতে লাগলেন।

 ব্যাস বর দিয়েছিলেন যে গান্ধারীর শত পুত্র হবে। যথাকালে গান্ধারী গর্ভবতী হলেন, কিন্তু দুই বৎসরেও তাঁর সন্তান ভূমিষ্ঠ হ’ল না এবং কুন্তীর একটি পুত্র (যুধিষ্ঠির) হয়েছে জেনে তিনি অধীর ও ঈর্ষান্বিত হলেন। ধৃতরাষ্ট্রকে না জানিয়ে গান্ধারী নিজের গর্ভপাত করলেন, তাতে লৌহের ন্যায় কঠিন একটি মাংসপিণ্ড প্রসূত হ’ল। তিনি সেই পিণ্ড ফেলে দিতে যাচ্ছিলেন এমন সময় ব্যাস এসে বললেন, আমার কথা মিথ্যা হবে না। ব্যাসের উপদেশে গান্ধারী শীতল জলে মাংসপিণ্ড ভিজিয়ে রাখলেন, তা থেকে অঙ্গুষ্ঠপ্রমাণ এক শ এক ভ্রূণ পৃথক হ’ল। সেই ভ্রূণগুলিকে তিনি পৃথক পৃথক ঘৃতপূর্ণ কলসে রাখলেন। এক বৎসর পরে একটি কলসে দুর্যোধন জন্মগ্রহণ করলেন। তাঁর পূর্বেই কুন্তীপত্র যুধিষ্ঠির জন্মেছিলেন, সে কারণে যুধিষ্ঠিরই জ্যেষ্ঠ। দুর্যোধন ভীম একই দিনে জন্মগ্রহণ করেন।

 দুর্যোধন জ’ন্মেই গদর্ভের ন্যায় কর্কশ কণ্ঠে চিৎকার ক’রে উঠালেন, সঙ্গে সঙ্গে গৃধ্র শৃগাল কাক প্রভৃতিও ডাকতে লাগল এবং অন্যান্য দুর্লক্ষণ দেখা গেল। ধৃতরাষ্ট্র ভয় পেয়ে ভীষ্ম বিদুর প্রভৃতিকে বললেন, আমাদের বংশের জ্যেষ্ঠ রাজপুত্র যুধিষ্ঠির তো রাজ্য পাবেই, কিন্তু তার পরে আমার এই পুত্র রাজা হবে তো? শৃগালাদি শ্বাপদ জন্তুরা আবার ডেকে উঠল। তখন ব্রাহ্মণগণ ও বিদুর বললেন, আপনার পুত্র নিশ্চয় বংশ নাশ করবে, ওকে পরিত্যাগ করাই মঙ্গল। পুত্রস্নেহের বশে ধৃতরাষ্ট্র তা করলেন না। এক মাসের মধ্যে তাঁর দুর্যোধন দুঃশাসন দুঃসহ