পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আদিপর্ব
৪৯

প্রভৃতি একশত পুত্র এবং দুঃশলা নামে একটি কন্যা হ’ল। গান্ধারী যখন গভর্ভারে ক্লিষ্ট ছিলেন তখন এক বৈশ্যা ধৃতরাষ্ট্রের সেবা করত। তার গর্ভে যুযুৎসু নামক পুত্র জন্মগ্রহণ করে।

২০। যুধিষ্ঠিরাদির জন্ম—পাণ্ডু ও মাদ্রীর মৃত্যু

 একদিন পাণ্ডু অরণ্যে বিচরণ করতে করতে একটি হরিণমিথুনকে শরবিদ্ধ করলেন। আহত হরিণ ভূপতিত হয়ে বললে, কামক্রোধের বশবর্তী মূঢ় ও পাপাসক্ত লোকেও এমন নৃশংস কর্ম করে না। কোন্ জ্ঞানবান পুরুষ মৈথুনে রত মৃগদম্পতিকে বধ করে? মহারাজ, আমি কিমিন্দম মুনি, পুত্রকামনায় মৃগরূপ ধারণ করে পত্নীর সহিত সংগত হয়েছিলাম। তুমি জানতে না যে আমি ব্রাহ্মণ, সেজন্য তোমার ব্রহ্মহত্যার পাপ হবে না, কিন্তু আমার শাপে তোমারও স্ত্রীসংগমকালে মৃত্যু হবে।

 শাপগ্রস্ত পাণ্ডু বহু বিলাপ করে বললেন, আমি সংসার ত্যাগ করে ভিক্ষু হব, কঠোর তপস্যা ও কৃচ্ছসাধন করব। শাপের ফলে আমার সন্তান উৎপাদন অসম্ভব, অতএব গৃহস্থাশ্রমে আর থাকব না। কুন্তী ও মাদ্রী তাঁকে বললেন, আমরা তোমার ধর্মপত্নী, আমাদের সঙ্গে থেকেই তো তপস্যা করতে পার, আমরাও ইন্দ্রিয়দমন করে তপস্যা করব। তার পর পাণ্ডু নিজের এবং দুই পত্নীর সমস্ত অলংকার ব্রাহ্মণদের দান ক’রে হস্তিনাপুরে সংবাদ পাঠালেন যে তিনি প্রব্রজ্যা গ্রহণ ক’রে অরণ্যবাসী হয়েছেন।

 পাণ্ডু তাঁর দুই পত্নীর সঙ্গে নাগশত, চৈত্ররথ, কালকূট, হিমালয়ের উত্তরস্থ গন্ধমাদন পর্বত, ইন্দ্রদ্যুম্ন সরোবর এবং হংসকূট অতিক্রম ক’রে শতশৃঙ্গ পর্বতে এসে তপস্যা করতে লাগলেন। বহু ঋষির সঙ্গে তাঁর সখ্য হ’ল। একদিন ঋষিরা বললেন, আজ ব্রহ্মলোকে মহাসভা হবে, আমরা ব্রহ্মাকে দেখতে সেখানে যাচ্ছি। সস্ত্রীক পাণ্ডু তাঁদের সঙ্গে যেতে চাইলে তাঁরা বললেন, সেই দুর্গম দেশে এই রাজপুত্রীরা যেতে পারবেন না, তুমি নিরস্ত হও। পাণ্ডু বললেন, আমি নিঃসন্তান, স্বর্গের দ্বার আমার পক্ষে রুদ্ধ, সেজন্য আপনাদের সঙ্গে যেতে চেয়েছিলাম। আমি যজ্ঞ, বেদাধ্যয়ন-তপস্যা আর অনিষ্ঠুরতার দ্বারা দেব, ঋষি ও মনুষ্যের ঋণ থেকে মুক্ত হয়েছি, কিন্তু পুত্রোৎপাদন ও শ্রাদ্ধদ্বারা পিতৃ-ঋণ থেকে মুক্ত হতে পারি নি। আমি যে ভাবে জন্মেছি সেই ভাবে আমার পত্নীর গর্ভে যাতে সন্তান হ’তে পারে তার