পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫০
মহাভারত

উপায় আপনারা বলুন। ঋষিরা বললেন, রাজা, আমরা দিব্য চক্ষুতে দেখছি তোমার দেবতুল্য পুত্র হবে।

 পাণ্ডু নির্জনে কুন্তীকে বললেন, তুমি সন্তান লাভের জন্য চেষ্টা কর, আপৎকালে স্ত্রীলোক উত্তম বর্ণের পুরুষ অথবা দেবর থেকে পুত্রলাভ করতে পারে। কুন্তী বললেন, আমি শুনেছি রাজা ব্যুষিতাশ্ব যক্ষ্মা রোগে প্রাণত্যাগ করলে তাঁর মহিষী ভদ্রা মৃতপতির সহিত সংগমে পুত্রবতী হয়েছিলেন। তুমিও তপস্যার প্রভাবে আমার গর্ভে মানস পুত্র উৎপাদন করতে পার। পাণ্ডু বললেন, ব্যুষিতাশ্ব দেবতুল্য শক্তিমান ছিলেন, আমার তেমন শক্তি নেই। আমি প্রাচীন ধর্মতত্ত্ব বলছি শোন। পুরাকালে নারীরা স্বাধীন ছিল, তারা স্বামীকে ছেড়ে অন্য পুরুষের সঙ্গে বিচরণ করত, তাতে দোষ হ’ত না, কারণ প্রাচীন ধর্মই এইপ্রকার। উত্তরকুরুদেশবাসী এখনও সেই ধর্মানুসারে চলে। এদেশেও সেই প্রাচীন প্রথা অধিককাল রহিত হয় নি। উদ্দালক নামে এক মহর্ষি ছিলেন, তাঁর পুত্রের নাম শ্বেতকেতু। একদিন শ্বেতকেতু দেখলেন, তাঁর পিতার সমক্ষেই এক ব্রাহ্মণ তাঁর মাতার হাত ধ’রে টেনে নিয়ে গেলেন। উদ্দালক শ্বেতকেতুকে বললেন, তুমি ক্রুদ্ধ হয়ো না, সনাতন ধর্মই এই, পৃথিবীতে সকল স্ত্রীলোকই গরুর তুল্য স্বাধীন। শ্বেতকেতু অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন, আজ থেকে যে নারী পরপুরুষগামিনী হবে, যে পুরুষ পতিব্রতা পত্নীকে ত্যাগ ক’রে অন্য নারীর সংসর্গ করবে, এবং যে নারী পতির আজ্ঞা পেয়েও ক্ষেত্রজ পুত্র উৎপাদনে আপত্তি করবে, তাদের সকলেরই ভ্রূণহত্যার পাপ হবে। কুন্তী; কৃষ্ণদ্বৈপায়ন থেকে আমাদের জন্ম হয়েছে তা তুমি জান। আমি পুত্রপ্রার্থী, মস্তকে অঞ্জলি রেখে অনুনয় করছি, তুমি কোনও তপস্বী ব্রাহ্মণের কাছে গুণবান পুত্র লাভ কর।

 কুন্তী তখন দুর্বাসার বরের বৃত্তান্ত পাণ্ডুকে জানিয়ে বললেন, মহারাজ, তুমি অনুমতি দিলে আমি কোনও দেবতা বা ব্রাহ্মণকে মন্ত্রবলে আহ্বান করতে পারি। দেবতার কাছে সদ্য পুত্রলাভ হবে, ব্রাহ্মণের কাছে বিলম্ব হবে। পাণ্ডু বললেন, আমি ধন্য হয়েছি, অনুগৃহীত হয়েছি, তুমিই আমাদের বংশের রক্ষিত্রী। দেবগণের মধ্যে ধর্মই সর্বাপেক্ষা পুণ্যবান, আজই তুমি তাঁকে আহ্বান কর।

 গান্ধারী যখন এক বৎসর গর্ভধারণ করেছিলেন সেই সময়ে কুন্তী মন্ত্রবলে ধর্মকে আহ্বান করলেন। শতশৃঙ্গ পর্বতের উপর ধর্মের সহিত সংগমের ফলে কুন্তী পুত্রবতী হলেন। প্রসবকালে দৈববাণী হ’ল—এই বালক ধার্মিকগণের শ্রেষ্ঠ, বিক্রান্ত, সত্যবাদী ও পৃথিবীপতি হবে, এবং যুধিষ্ঠির নামে খ্যাত হবে।