পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আদিপর্ব
৫১

 তার পর পাণ্ডুর ইচ্ছাক্রমে বায়ু ও ইন্দ্রকে আহ্বান করে কুন্তী ভীম ও অর্জুন নামে আরও দুই পুত্র লাভ করলেন। একদিন মাদ্রী পাণ্ডুকে বললেন, মহারাজ কুন্তী আমার সপত্নী, তাঁকে আমি কিছু বলতে সাহস করি না, কিন্তু তুমি বললে তিনি আমাকেও পুত্রবতী করতে পারেন। পাণ্ডু অনুরোধ করলে কুন্তী সম্মত হলেন এবং তাঁর উপদেশে মাদ্রী অশ্বিনীকুমারদ্বয়কে স্মরণ ক’রে নকুল ও সহদেব নামে যমজ পুত্র লাভ করলেন। মাদ্রীর আরও পুত্রের জন্য পাণ্ডু অনুরোধ করলে কুন্তী বললেন, আমি মাদ্রীকে বলেছিলাম—কোনও এক দেবতাকে স্মরণ কর, কিন্তু সে যুগল দেবতাকে আহ্বান ক’রে আমাকে প্রতারিত করেছে। মহারাজ, আমাকে আর অনুরোধ ক’রো না।

 দেবতার প্রসাদে লব্ধ পাণ্ডুর এই পঞ্চ পুত্র কালক্রমে চন্দ্রের ন্যায় প্রিয়দর্শন, সিংহের ন্যায় বলশালী এবং দেবতার ন্যায় তেজস্বী হ’ল। একদিন রমণীয় বসন্তকালে পাণ্ডু নির্জনে মাদ্রীকে দেখে সংযম হারালেন এবং পত্নীর নিযেধ অগ্রাহ্য করে তাঁকে সবলে গ্রহণ করলেন। শাপের ফলে সংগমকালেই পাণ্ডুর প্রাণবিয়োগ হ’ল। মাদ্রীর আর্তনাদ শুনে কুন্তী সেখানে এলেন এবং বিলাপ করে বললেন, আমি রাজাকে সর্বদা সাবধানে রক্ষা করতাম, তুমি এই বিজন স্থানে কেন তাঁকে লোভিত করলে? তুমি আমার চেয়ে ভাগ্যবতী, তাঁকে হৃষ্ট দেখেছ। আমি জ্যেষ্ঠা ধর্মপত্নী, সেজন্য ভর্তার সহমৃতা হব। তুমি এই বালকদের পালন কর। মাদ্রী বললেন, আমি কামভোগে তৃপ্ত হই নি, অতএব পতির অনুসরণ করব। তোমার তিন পুত্রকে আমি নিজ পুত্রের ন্যায় দেখতে পারব না, তুমিই আমার দুই পুত্রকে নিজপুত্রবৎ পালন কর। এই বলে মাদ্রী পাণ্ডুর সহগমনকামনায় প্রাণত্যাগ করলেন।

২১। হস্তিনাপুরে পঞ্চপাণ্ডব—ভীমের নাগলোক দর্শন

 পাণ্ডুর আশ্রমের নিকট যে সকল ঋষি বাস করতেন তাঁরা মন্ত্রণা ক’রে পাণ্ডু ও মাদ্রীর মৃতদেহ এবং কুন্তী ও রাজপুত্রদের নিয়ে হস্তিনাপুরে গেলেন। এই সময়ে যুধিষ্ঠিরের বয়স ষোল, ভীমের পনর, অর্জুনের চোদ্দ এবং নকুল-সহদেবের তের। ঋষিরা রাজসভায় এলে কৌরবগণ প্রণত হয়ে সংবর্ধনা করলেন। ঋষিদের মধ্যে যিনি বৃদ্ধতম তিনি পাণ্ডু ও মাদ্রীর মৃত্যুবিবরণ এবং যুধিষ্ঠিরাদির পরিচয় দিলেন এবং সভাস্থ সকলকে বিস্মিত ক’রে সঙ্গিগণসহ অন্তর্হিত হলেন।

 ধৃতরাষ্ট্রের আদেশে বিদুর পাণ্ডু ও মাদ্রীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া করলেন। ত্রয়োদশ দিনে শ্রাদ্ধাদি কৃত্য সম্পন্ন হ’ল, সকলে দুঃখিত মনে রাজপুরীতে ফিরে