পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আদিপর্ব
৫৩

জলবিহার শেষ করে কৌরব[১]) ও পাণ্ডবগণ ভীমকে দেখতে পেলেন না। ভীম আগেই চলে গেছেন মনে করে তাঁরা রথ গজ ও অশ্বে হস্তিনাপুরে ফিরে গেলেন। ভীমকে না দেখে কুন্তী অত্যন্ত উদ্‌বিগ্ন হলেন। বিদুর যুধিষ্ঠির প্রভৃতি সমস্ত নগরোদ্যানে অন্বেষণ করেও কোথাও তাঁকে পেলেন না। কুন্তীর ভয় হ’ল, হয়তো ক্রূর দুর্যোধন ভীমকে হত্যা করেছে। বিদুর তাঁকে আশ্বাস দিয়ে বললেন, এমন কথা বলবেন না, মহামুনি ব্যাস বলেছেন আপনার পুত্রেরা দীর্ঘায়ু হবে।

 অষ্টম দিনে ভীমের নিদ্রাভঙ্গ হ’ল। নাগগণ তাঁকে বললে, রসায়ন জীর্ণ ক’রে তুমি অযুত হস্তীর বল পেয়েছ, এখন দিব্য জলে স্নান ক’রে গৃহে যাও। ভীম স্নান ক’রে উত্তম অন্ন ভোজন করলেন এবং নাগদের আশীর্বাদ নিয়ে দিব্য আভরণে ভূষিত হয়ে স্বগৃহে ফিরে গেলেন। সকল বৃত্তান্ত শুনে যুধিষ্ঠির বললেন, চুপ করে থাক, এ বিষয় নিয়ে আলোচনা ক’রো না, এখন থেকে আমাদের সাবধানে থাকতে হবে। দুর্যোধন বিফলমনোরথ হয়ে মনস্তাপ ভোগ করতে লাগলেন।

 রাজকুমারদের শিক্ষার জন্য ধৃতরাষ্ট্র গৌতমগোত্রজ কৃপাচার্যকে নিযুক্ত করলেন।

২২। কৃপ—দ্রোণ—অশ্বত্থামা—একলব্য—অর্জুনের পটুতা

 মহর্ষি গৌতমের শরদ্বান নামে এক শিষ্য ছিলেন, তাঁর ধনুর্বেদে যেমন বুদ্ধি ছিল বেদাধ্যয়নে তেমন ছিল না। তাঁর তপস্যায় ভয় পেয়ে ইন্দ্র জানপদী নামে এক অপ্সরা পাঠালেন। তাকে দেখে শরদ্বানের হাত থেকে ধনুর্বাণ প’ড়ে গেল এবং রেতঃপাত হ’ল। সেই রেতঃ একটি শরস্তম্বে প’ড়ে দু ভাগ হ’ল, তা থেকে একটি পুত্র ও একটি কন্যা জন্মগ্রহণ করলে। রাজা শান্তনু তাদের দেখতে পেয়ে কৃপা ক’রে গৃহে এনে সন্তানবৎ পালন করলেন এবং বালকের নাম কৃপ ও বালিকার নাম কৃপী রাখলেন। শরদ্বান তপোবলে তাদের বৃত্তান্ত জানতে পেরে রাজভবনে এলেন এবং কৃপকে শিক্ষা দিয়ে ধনুর্বেদে পারদর্শী করলেন। যুধিষ্ঠির দুর্যোধন প্রভৃতি এবং বৃষ্ণিবংশীয় ও নানাদেশের রাজপুত্রগণ এই কৃপাচার্যের কাছে অস্ত্রবিদ্যা শিখতে লাগলেন।


  1. ধৃতরাষ্ট্র ও পাণ্ডু দুজনেই কুরুবংশজাত সেজন্য কৌরব। তথাপি সাধারণত দুর্যোধনাদিকেই কৌরব এবং তাঁদের পক্ষকে কুরু বলা হয়।