পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৪
মহাভারত

 ভরদ্বাজ ঋষি গঙ্গোত্তরী প্রদেশে বাস করতেন। একদিন স্নানকালে ঘৃতাচী অপ্সরাকে দেখে তাঁর শুক্রপাত হয়। সেই শুক্র তিনি কলসের মধ্যে রাখেন তা থেকে দ্রোণ জন্মগ্রহণ করেন। অগ্নিবেশ্য মুনি দ্রোণকে আগ্নেয়াস্ত্র শিক্ষা দেন। পাঞ্চালরাজ পৃষত ভরদ্বাজের সখা ছিলেন, তাঁর পুত্র দ্রুপদ দ্রোণের সঙ্গে খেলা করতেন। পিতার আদেশে দ্রোণ কৃপীকে বিবাহ করলেন। তাঁদের একটি পুত্র হয়, সে ভূমিষ্ঠ হয়েই অশ্বের ন্যায় চিৎকার করেছিল সেজন্য তার নাম অশ্বত্থামা হ’ল।

 ভরদ্বাজের মৃত্যুর পর দ্রোণ পিতার আশ্রমে থেকে তপস্যা ও ধনুর্বেদ চর্চা করতে লাগলেন। একদিন তিনি শুনলেন যে অস্ত্রজ্ঞগণের শ্রেষ্ঠ ভৃগুনন্দন পরশুরাম তাঁর সমস্ত ধন ব্রাহ্মণদের দিতে ইচ্ছা করেছেন। দ্রোণ মহেন্দ্র পর্বতে পরশুরামের কাছে গিয়ে প্রণাম করে ধন চাইলেন। পরশুরাম বললেন, আমার কাছে সুবর্ণাদি যা ছিল সবই ব্রাহ্মণদের দিয়েছি, সমগ্র পৃথিবী কশ্যপকে দিয়েছি, এখন কেবল আমার শরীর আর অস্ত্রশস্ত্র অবশিষ্ট আছে, কি চাও বল। দ্রোণ বললেন, আপনি সমস্ত অস্ত্রশস্ত্র আমাকে দিন এবং তাদের প্রয়োগ ও প্রত্যাহরণের বিধি আমাকে শেখান। পরশুরাম দ্রোণের প্রার্থনা পূরণ করলেন। দ্রোণ কৃতার্থ হয়ে পাঞ্চালরাজ দ্রুপদের কাছে গেলেন, কিন্তু ঐশ্বর্যগর্বে দ্রুপদ তাঁর বাল্যসখার অপমান করলেন। দোণ ক্রোধে অভিভূত হয়ে হস্তিনাপুরে গিয়ে কৃপাচার্যের গৃহে গোপনে বাস করতে লাগলেন।

 একদিন রাজকুমারগণ নগরের বাইরে এসে বীটা[১] নিয়ে খেলছিলেন। দৈবক্রমে তাঁদের বীটা কুপের মধ্যে প’ড়ে গেল, অনেক চেষ্টা ক’রেও তাঁরা তুলতে পারলেন না। একজন শ্যামবর্ণ পক্ককেশ কৃশকায় ব্রাহ্মণ নিকটে ব’সে হোম করছেন দেখে তাঁরা তাঁকে ঘিরে দাঁড়ালেন। এই ব্রাহ্মণ দ্রোণ। তিনি সহাস্যে বললেন, ধিক তোমাদের ক্ষত্রবল আর অস্ত্রশিক্ষা, ভরতবংশে জন্মে একটা বীটা তুলতে পারলে না! তোমাদের বীটা আর আমার এই অঙ্গুরীয় আমি ঈষীকা (কাশ তৃণ) দিয়ে তুলে দেব, কিন্তু আমাকে খাওয়াতে হবে। যুধিষ্ঠির বললেন, কৃপাচার্য অনুমতি দিলে আপনি প্রত্যহ আহার পাবেন। দ্রোণ সেই শুষ্ক কূপে তাঁর আংটি ফেললেন, তার পর একটি ঈষীকা ফেলে বীটা বিদ্ধ করলেন, তার পর আর একটি ঈষীকা দিয়ে প্রথম ঈষীকা বিদ্ধ করলেন। এইরূপে পর পর ঈষীকা ফেলে উপরের ঈষীকা ধ’রে বীটা টেনে তুললেন। রাজপুত্রেরা এই ব্যাপার দেখে উৎফুল্ল নয়নে সবিস্ময়ে

  1. পুলির আকার কাষ্ঠখণ্ড, গুলিডাণ্ডা খেলার গুলি।