পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আদিপর্ব
৫৭

 একদিন দ্রোণ একটি কৃত্রিম ভাস[১] পক্ষী গাছের উপর রেখে কুমারদের বললেন, তোমরা ওই পক্ষীকে লক্ষ্য ক’রে স্থির হয়ে থাক, যাকে বলব সে শরাঘাতে ওর মুণ্ডচ্ছেদ ক’রে ভূমিতে ফেলবে। সকলে শরসন্ধান করলে দ্রোণ যুধিষ্ঠিরকে বললেন, তুমি গাছের উপর ওই পাখি দেখছ? এই গাছ, আমাকে আর তোমার ভ্রাতাদের দেখছ? যুধিষ্ঠির বললেন যে তিনি সবই দেখতে পাচ্ছেন। দ্রোণ বিরক্ত হয়ে বললেন, সরে যাও, তুমি এই লক্ষ্য বেধ করতে পারবে না। দুর্যোধন ভীম প্রভৃতিও বললেন, আমরা সবই দেখছি। দ্রোণ তাঁদেরও সরিয়ে দিলেন। তার পর অর্জুনকে প্রশ্ন করলে তিনি বললেন, আমি কেবল ভাস পক্ষী দেখছি। দ্রোণ বললেন, আবার বল। অর্জুন বললেন, কেবল ভাসের মস্তক দেখছি। আনন্দে রোমাঞ্চিত হয়ে দ্রোণ বললেন, এইবারে শর ত্যাগ কর। তৎক্ষণাৎ অর্জুনের ক্ষুরধার শরে ভাসের ছিন্ন মুণ্ড ভূমিতে প’ড়ে গেল।

 একদিন শিষ্যদের সঙ্গে দ্রোণ গঙ্গায় স্নান করতে গেলেন। তিনি জলে নামলে একটা কুম্ভীর[২] তাঁর জঙ্ঘা কামড়ে ধরলে। দ্রোণ শিষ্যদের বললেন, তোমরা শীঘ্র আমাকে রক্ষা কর। তাঁর বাক্যের সঙ্গে সঙ্গেই অর্জুন পাঁচ শরে কুম্ভীরকে খণ্ড খণ্ড করলেন, অন্য শিষ্যরা মূঢ়ের ন্যায় দাঁড়িয়ে রইলেন। দ্রোণ প্রীত হ’য়ে অর্জুনকে ব্রহ্মশির নামক অস্ত্র দান ক’রে বললেন, এই অস্ত্র মানুষের প্রতি প্রয়োগ ক’রো না, যদি অন্য শত্রু তোমাকে আক্রমণ করে, তবেই প্রয়োগ করবে।

২৩। অস্ত্রশিক্ষা প্রদর্শন

 একদিন ব্যাস কৃপ ভীষ্ম বিদুর প্রভৃতির সমক্ষে দ্রোণাচার্য ধৃতরাষ্ট্রকে বললেন, মহারাজ, কুমারদের অস্ত্রাভ্যাস সম্পূর্ণ হয়েছে, আপনি অনুমতি দিলে তাঁরা নিজ নিজ শিক্ষা প্রদর্শন করবেন। ধৃতরাষ্ট্র হষ্ট হ’য়ে বললেন, আপনি মহৎ কর্ম সম্পন্ন করেছেন, আমার ইচ্ছা হচ্ছে চক্ষুষ্মান লোকের ন্যায় আমিও কুমারগণের পরাক্রম দেখি।

 ধৃতরাষ্ট্রের আজ্ঞায় এবং দ্রোণের নির্দেশ অনুসারে বিদুর সমতল স্থানে বিশাল রঙ্গভূমি নির্মাণ করালেন এবং ঘোষণা ক’রে সাধারণকে জানিয়ে শুভ তিথিনক্ষত্রযোগে দেবপূজা করলেন। নির্দিষ্ট দিনে ভীষ্ম ও কৃপাচার্যকে অগ্রবর্তী ক’রে

  1. মোরগ অথবা শকুন।
  2. মূলে ‘গ্রাহ’ আছে, তার অর্থ কুম্ভীর হাঙ্গর দুইই হয়।