পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬০
মহাভারত

দুর্যোধন তখনই কর্ণকে স্বর্ণময় পীঠে বসালেন, মন্ত্রজ্ঞ ব্রাহ্মণগণ লাজ পুষ্প স্বর্ণঘটের জল প্রভৃতি উপকরণে তাঁকে অভিষিক্ত করলেন।

 এমন সময় কর্ণের পালকপিতা অধিরথ ঘর্মাক্ত ও কম্পিত দেহে যষ্টিহস্তে প্রবেশ করলেন। তাঁকে দেখে কর্ণ ধনু ত্যাগ ক’রে নতমস্তকে প্রণাম করলেন, অধিরথ সসম্ভ্রমে তাঁর চরণ আবৃত[১] ক’রে পুত্রকে সস্নেহে আলিঙ্গন এবং তাঁর মস্তক অশ্রুজলে অভিষিক্ত করলেন। ভীম সহাস্যে বললেন, সূতপত্র, তুমি অর্জুনের হাতে মরবার যোগ্য নও, তুমি কশা হাতে নিয়ে কুলধর্ম পালন কর। কুকুর যজ্ঞের পুরোডাশ খেতে পারে না, তুমিও অঙ্গরাজ্য ভোগ করতে পার না। ক্রোধে কর্ণের ওষ্ঠ কম্পিত হ’তে লাগল। দুর্যোধন বললেন, ভীম, এমন কথা বলা তোমার উচিত হয় নি। দ্রোণাচার্য কলস থেকে এবং কৃপাচার্য শরস্তম্ব থেকে জন্মেছিলেন, আর তোমাদের জন্মবৃত্তান্তও আমার জানা আছে। কবচকুণ্ডলধারী সর্বলক্ষণযুক্ত কর্ণ নীচ বংশে জন্মাতে পারেন না। কেবল অঙ্গরাজ্য নয়, সমস্ত পৃথিবীই ইনি ভোগ করবার যোগ্য। যারা অন্যরূপ মনে করে তারা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হ’ক।

 এই সময়ে সূর্যাস্ত হ’ল। দুর্যোধন কর্ণের হাত ধ’রে রঙ্গভূমি থেকে প্রস্থান করলেন। পাণ্ডবগণ, দ্রোণ, কৃপ, ভীষ্ম প্রভৃতিও নিজ নিজ ভবনে চ’লে গেলেন। কর্ণ অঙ্গরাজ্য পেলেন দেখে কুন্তী আনন্দিত হলেন। যুধিষ্ঠিরের এই বিশ্বাস হ’ল যে কর্ণের তুল্য ধনুর্ধর পৃথিবীতে নেই।

২৪। দ্রুপদের পরাজয়—দ্রোণের প্রতিশোধ

 দ্রোণাচার্য শিষ্যগণকে বললেন, তোমাদের শিক্ষা শেষ হয়েছে, এখন আমার দক্ষিণা চাই। তোমরা যুদ্ধ করে পাঞ্চালরাজ দ্রুপদকে জীবন্ত ধরে নিয়ে এস, তাই শ্রেষ্ঠ গুরুদক্ষিণা। রাজকুমারগণ সম্মত হলেন এবং দ্রোণকে সঙ্গে নিয়ে সসৈন্যে পাঞ্চাল রাজ্য আক্রমণ করলেন।

 দ্রুপদ রাজা ও তাঁর ভ্রাতৃগণ রথারোহণে এসে কৌরবগণের প্রতি শরবর্ষণ করতে লাগলেন। দুর্যোধন প্রভৃতির দর্প দেখে অর্জুন দ্রোণকে বললেন, ওরা দ্রুপদকে বন্দী করতে পারবে না। ওরা আগে নিজেদের বিক্রম দেখাক তার পর

  1. কর্ণ উচ্চজাতীয় এই সম্ভাবনায়।