পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আদিপর্ব
৬১

আমরা যুদ্ধে নামর। এই ব’লে তিনি নগর থেকে অর্ধ ক্রোশ দূরে ভ্রাতাদের সঙ্গে অপেক্ষা করতে লাগলেন।

 দ্রুপদের বাণবর্ষণে দুর্যোধনাদি ব্যতিব্যস্ত হলেন, তাঁদের সৈন্যের উপর নগরবাসী বালক বৃদ্ধ সকলে মিলে মূষল ও বৃষ্টি বর্ষণ করতে লাগল। কৌরবদের আর্তরব শুনে যুধিষ্ঠিরকে তাঁর ভ্রাতারা বললেন, আপনি যুদ্ধ করবেন না। এই ব’লে তাঁরা রথারোহণে অগ্রসর হলেন। ভীম কৃতান্তের ন্যায় গদাহস্তে ধাবিত হ’য়ে পাঞ্চালরাজের গজসৈন্য অশ্ব রথ প্রভৃতি ধ্বংস করতে লাগলেন। তার পর অর্জুনের সঙ্গে দ্রুপদ ও তাঁর ভ্রাতা সত্যজিতের ভীষণ যুদ্ধ হ’ল। অর্জুনের শরাঘাতে সত্যজিতের অশ্ব ও সারথি বিনষ্ট হ’ল, সত্যজিৎ পলায়ন করলেন। তখন অর্জুন দ্রুপদের ধনু ও রথধ্বজ ছিন্ন এবং অশ্ব ও সারথিকে শরবিদ্ধ ক’রে খড়্গহস্তে লম্ফ দিয়ে তাঁর রথে উঠলেন। পাঞ্চাল সৈন্য দশ দিকে পালাতে লাগল। দ্রুপদকে ধ’রে অর্জুন ভীমকে বললেন, দ্রুপদ রাজা কুরবীরগণের আত্মীয়, তাঁর সৈন্য বধ করবেন না, আসুন, আমরা গুরুদক্ষিণা দেব।

 কুমারগণ দ্রুপদ আর তাঁর অমাত্যকে ধরে এনে দ্রোণকে দক্ষিণাস্বরূপ উপহার দিলেন। দ্রোণ বললেন, দ্রুপদ, আমি তোমার রাষ্ট্র দলিত ক’রে রাজপুরী অধিকার করেছি, তোমার জীবনও শত্রুর অধীন, এখন পূর্বের বন্ধুত্ব স্মরণ ক’রে কি চাও তা বল। তার পর দ্রোণ সহাস্যে বললেন, বীর প্রাণের ভয় ক’রো না, আমরা ক্ষমাশীল ব্রাহ্মণ। তুমি বাল্যকালে আমার সঙ্গে খেলেছিলে, সেজন্য তোমার প্রতি আমার স্নেহ আছে। অরাজা রাজার সখা হ’তে পারে না, তোমাকে আমি অর্ধ রাজ্য দিচ্ছি, যদি ইচ্ছা কর তবে আমাকে সখা মনে করতে পার। দ্রুপদ বললেন, শক্তিমান মহাত্মার পক্ষে এমন আচরণ আশ্চর্য নয়, আমি প্রীত হয়েছি, আপনার চিরস্থায়ী প্রণয় কামনা করি। তখন দ্রোণাচার্য তুষ্ট হয়ে দ্রুপদকে মুক্তি দিলেন।

 গঙ্গার দক্ষিণে চর্মস্বতী নদী পর্যন্ত দেশ দ্রুপদের অধিকারে রইল, দ্রোণাচার্য গঙ্গার উত্তরে অহিচ্ছত্র দেশ পেলেন। মনঃক্ষুণ্ণ দ্রুপদ পুত্রলাভের জন্য চেষ্টা করতে লাগলেন।

২৫। ধৃতরাষ্ট্রের ঈর্ষা

 এক বৎসর পরে ধৃতরাষ্ট্র যুধিষ্ঠিরকে যৌবরাজ্যে প্রতিষ্ঠিত করলেন। ধৈর্য স্থৈর্য অনিষ্ঠুরতা সরলতা প্রভৃতি গুণে যুধিষ্ঠির তাঁর পিতা পাণ্ডুর কীর্তিও