পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মহাভারত
৬৩

আপনি কৌশল ক’রে পাণ্ডবদের বারণাবতে নির্বাসিত করুন, তা হ’লে আমাদের আর ভয় থাকবে না।

 ধৃতরাষ্ট্র বললেন, পাণ্ডু যেমন প্রজাদের প্রিয় ছিলেন যুধিষ্ঠিরও সেইরূপ হয়েছেন, তাঁর সহায়ও আছে, তাঁকে আমরা কি করে নির্বাসিত করতে পারি? ভীষ্ম দ্রোণ বিদুর কৃপ তা সমর্থন করবেন না। দুর্যোধন বললেন, আমি অর্থ আর সম্মান দিয়ে প্রজাদের বশ করেছি, অমাত্যগণ এবং ধনাগারও আমাদের হাতে। ভীষ্মের কোনও পক্ষপাত নেই, অশ্বত্থামা আমাদের পক্ষে আছেন, দ্রোণও পুত্রের অনুসরণ করবেন, কৃপও তাঁর ভাগিনেয়কে ত্যাগ করবেন না। বিদুর আমাদের অর্থে পুষ্ট হয়েও গোপনে পাণ্ডবদের পক্ষপাতী, কিন্তু তিনি একলা আমাদের বাধা দিতে পারবেন না। আপনি আজই পঞ্চপাণ্ডব আর কুন্তীকে বারণাবতে পাঠান।

 ধৃতরাষ্ট্রের উপদেশ অনুসারে কয়েকজন মন্ত্রী পাণ্ডবদের কাছে গিয়ে বললেন, বারণাবত অতি মনোরম নগর, সেখানে পশুপতির উৎসব উপলক্ষ্যে এখন বহু লোকের সমাগম হয়েছে। এইপ্রকার বর্ণনা শুনে পাণ্ডবদের সেখানে যাবার ইচ্ছা হল। ধৃতরাষ্ট্র তাঁদের বললেন, বৎসগণ, আমি শুনেছি যে বারণাবত অতি রমণীয় নগর, তোমরা সেখানে উৎসব দেখে এবং ব্রাহ্মণ ও গায়কদের ধনদান ক’রে কিছুকাল আনন্দে কাটিয়ে এস। যুধিষ্ঠির ধৃতরাষ্ট্রের অভিপ্রায় এবং নিজের অসহায় অবস্থা বুঝে সম্মত হলেন এবং ভীষ্ম দ্রোণ প্রভৃতির আশীর্বাদ নিয়ে মাতা ও ভ্রাতাদের সঙ্গে যাত্রা করলেন।

 দুর্যোধন অতিশয় হৃষ্ট হলেন এবং পুরোচন নামক এক মন্ত্রীর হাত ধ’রে তাঁকে গোপনে বললেন, তুমি ভিন্ন আমার বিশ্বাসী সহায় কেউ নেই, তুমি দ্রুতগামী রথে আজই বারণাবতে যাও এবং শণ, সর্জরস (ধুনা) প্রভৃতি দিয়ে একটি চতুঃশাল (চকমিলান) সুসজ্জিত গৃহ নির্মাণ করাও। মৃত্তিকার সঙ্গে প্রচুর ঘৃত তৈল বসা জতু (গালা) মিশিয়ে তার দেওয়ালে লেপ দেবে এবং চতুর্দিকে কাষ্ঠ তৈল প্রভৃতি দাহ্য পদার্থ এমন ক’রে রাখবে যাতে পাণ্ডবরা বুঝতে না পারে। তুমি সমাদর ক’রে পাণ্ডবদের সেখানে বাসের জন্য নিয়ে যাবে এবং উত্তম আসন শয্যা যান প্রভৃতি দেবে। কিছুকাল পরে যখন তারা নিশ্চিতমনে নিদ্রামগ্ন থাকবে তখন দ্বারদেশে অগ্নিদান করবে। পুরোচন তখনই দুর্যোধনের আদেশ পালন করতে বারণাবতে গেলেন।

 বুদ্ধিমান বিদুর দুর্যোধনের ভাবভঙ্গী দেখে তাঁর দুষ্ট অভিসন্ধি বুঝতে পেরেছিলেন। বিদুর ও যুধিষ্ঠির দুজনেই ম্লেচ্ছভাষা জানতেন। যুধিষ্ঠিরের যাত্রাকালে বিদুর অন্যের অবোধ্য ম্লেচ্ছভাষায় তাঁকে বললেন, শত্রুর অভিসন্ধি যে