পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৪
মহাভারত

জানে সে যেন বিপদ থেকে নিস্তারের উপায় করে। লৌহ ভিন্ন অন্য অস্ত্রেও প্রাণনাশ হয়। অগ্নিতে শুষ্ক বন দগ্ধ হয় কিন্তু গর্তবাসীর হানি হয় না। মানুষ শজারুর ন্যায় গর্তপথে পালিয়ে আত্মরক্ষা করতে পারে। যে লোক নক্ষত্র দ্বারা দিঙ্‌নির্ণয় করতে পারে এবং পথ চিনে রাখে সে নিজেকে এবং আরও পাঁচজনকে বাঁচাতে পারে। যুধিষ্ঠির উত্তর দিলেন, বুঝেছি।

 পথে যেতে যেতে কুন্তী যুধিষ্ঠিরকে প্রশ্ন করলেন, বিদুর তোমাকে অবোধ্য ভাষায় কি বললেন আর তুমিও বুঝেছি বললে, এর অর্থ কি? যুধিষ্ঠির বললেন, বিদুরের কথার অর্থ—আমাদের ঘরে আগুন লাগবে, পালাবার জন্য সকল পথই যেন আমরা চিনে রাখি।

 পাণ্ডবগণ বারণাবতে এলে সেখানকার প্রজারা জয়ধ্বনি ক’রে সংবর্ধনা করলে, তাঁরাও ব্রাহ্মণাদি চতুবর্ণের অধিবাসীর গৃহে গিয়ে দেখা করলেন। পুরোচন মহাসমাদরে তাঁদের এক বাসভবনে নিয়ে গেলেন এবং আহার শয্যা প্রভৃতির ব্যবস্থা করলেন। সেখানে দশ রাত্রি বাসের পর তিনি পাণ্ডবদের অন্য এক ভবনে নিয়ে গেলেন, তার নাম ‘শিব’, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা অশিব। যুধিষ্ঠির সেখানে গিয়ে ঘৃত বসা ও লাক্ষার গন্ধ পেয়ে ভীমকে বললেন, নিপুণ শিল্পীরা এই গৃহ আগ্নেয় পদার্থ দিয়ে প্রস্তুত করেছে, পাপী পুরোচন আমাদের দগ্ধ করতে চায়। ভীম বললেন, যদি মনে করেন এখানে অগ্নিভয় আছে তবে পূর্বের বাসস্থানেই চলুন। যুধিষ্ঠিব তাতে সম্মত হলেন না, বললেন, আমরা সন্দেহ করছি জানলে পুরোচন বলপ্রয়োগ ক’রে আমাদের দগ্ধ করবে। যদি পালিয়ে যাই তবে দুর্যোধনের চরেরা আমাদের হত্যা করবে। আমরা মৃগয়ার ছলে এই দেশের সর্বত্র বিচরণ করে পথ জেনে রাখব এবং এই জতুগৃহের ভূমিতে গর্ত ক’রে তার ভিতরে বাস করব, আমাদের নিঃশ্বাসের শব্দও কেউ শুনতে পাবে না।

 সেই সময়ে একটি লোক এসে নির্জনে পাণ্ডবদের বললে, আমি খনন কার্যে নিপুণ, বিদুর আমাকে পাঠিয়েছেন। আপনাদের যাত্রার পূর্বে তিনি ম্লেচ্ছভাষায় যুধিষ্ঠিরকে সতর্ক করেছিলেন তা আমি জানি, এই আমার বিশ্বস্ততার প্রমাণ। কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশীর রাত্রিতে পুরোচন এই গৃহের দ্বারে আগুন দেবে। এখন আমাকে কি করতে হবে বলুন। যুধিষ্ঠির বললেন, তুমি বিদুরের তুল্যই আমার হিতার্থী, অগ্নিদাহ থেকে আমাদের রক্ষা কর। দুর্যোধনের আদেশে পুরোচন এই ভবনে অনেক অস্ত্র এনে রেখেছে, এখান থেকে পলায়ন করা দুঃসাধ্য। তুমি গোপনে আমাদের রক্ষার উপায় কর। খনক পরিখায় ও গৃহমধ্যে গর্ত ক’রে এক বৃহৎ সুরঙ্গ