পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৬
মহাভারত

পদ্মপুটে এবং উত্তরীয় ভিজিয়ে জল নিয়ে এলেন। সকলে ক্লান্ত হয়ে ভূমিতে নিদ্রামগ্ন হলেন, কেবল ভীম জেগে থেকে নানাপ্রকার চিন্তা করতে লাগলেন।

 রাত্রি প্রভাত হ’লে বারণাবতবাসীরা আগুন নিবিয়ে দেখলে পুরোচন পড়ে মরেছেন। পাণ্ডবদের খুঁজতে খুঁজতে তারা নিষাদী ও তার পাঁচ পুত্রের দগ্ধ দেহ পেয়ে স্থির করলে যে কুন্তী ও পঞ্চপাণ্ডব নিহত হয়েছেন। তারা সুরঙ্গ দেখতে পেলে না, কারণ খনক তা মাটি দিয়ে ভরিয়েছিল। হস্তিনাপুরে সংবাদ গেলে ধৃতরাষ্ট্র বহু বিলাপ করলেন এবং কুন্তী ও যুধিষ্ঠিরাদির অন্ত্যেষ্টির জন্য বারণাবতে লোক পাঠালেন। তার পর জ্ঞাতিগণের সঙ্গে ভীষ্ম ও সপুত্র ধৃতরাষ্ট নিরাভরণ হয়ে একবস্ত্রে গঙ্গায় গিয়ে তর্পণ করলেন। সকলে রোদন করতে লাগলেন, কেবল বিদুর অধিক শোক প্রকাশ করলেন না।

॥হিড়িম্ববধপর্বাধ্যায়॥

২৭। হিড়িম্ব ও হিড়িম্বা—ঘটোৎকচের জন্ম

 কুন্তী ও যুধিষ্ঠিরাদি যেখানে নিদ্রিত ছিলেন তার অনতিদূরে শালগাছেব উপর হিড়িম্ব নামে এক রাক্ষস ছিল। তার বর্ণ বর্ষার মেঘের ন্যায়, চক্ষু পিঙ্গল, বদন দংষ্ট্রাকরাল, কেশ ও শ্মশ্রু রক্তবর্ণ, আকার ভয়ংকর। পাণ্ডবদের দেখে এই রাক্ষসের মনুষ্যমাংস খাবার ইচ্ছা হ’ল, সে তার ভগিনী হিড়িম্বাকে বললে, বহু কাল পরে আমার প্রিয় খাদ্য উপস্থিত হয়েছে, তার গন্ধে আমার লালা পড়ছে, জিহ্বা বেরিয়ে আসছে। আজ নরম মাংসে আমার ধারাল আটটি দাঁত বসাব, মানুষের কণ্ঠ ছেদন ক’রে ফেনিল রক্ত পান করব। তুমি ওদের বধ ক’রে নিয়ে এস, আজ আমরা দুজনে প্রচুর নরমাংস খেয়ে হাততালি দিয়ে নাচব।

 ভ্রাতার কথা শুনে হিড়িম্বা গাছের উপর দিয়ে লাফাতে লাফাতে পাণ্ডবদের কাছে এসে দেখলে সকলেই নিদ্রিত, কেবল একজন জেগে আছেন। ভীমকে দেখে সে ভাবলে, এই মহাবাহু সিংহস্কন্ধ উজ্জ্বলকান্তি পুরুষই আমার স্বামী হবার যোগ্য। আমি ভ্রাতার কথা শুনব না, ভ্রাতৃস্নেহের চেয়ে পতিপ্রেমই বড়। কামরূপিণী হিড়িম্বা সুন্দরী সালংকারা নারীর রূপ ধারণ করে যেন লজ্জায় ঈষৎ হেসে ভীমসেনকে বললে, পুরুষশ্রেষ্ঠ, আপনি কে, কোথা থেকে এসেছেন? এই দেবতুল্য