পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আদিপর্ব
৬৭

পুরুষরা এবং এই সকুমারী রমণী যাঁরা ঘুমিয়ে রয়েছেন এঁরা কে? এই বনে আমার ভ্রাতা হিড়িম্ব নামক রাক্ষস থাকে, সে আপনাদের মাংস খেতে চায় সেজন্য আমাকে পাঠিয়েছে। আপনাকে দেখে আমি মোহিত হয়েছি, আপনি আমার পতি হ’ন। আমি আকাশচারিণী, আপনার সঙ্গে ইচ্ছানুসারে বিচরণ করব। ভীম বললেন, রাক্ষসী, নিদ্রিত মাতা ও ভ্রাতাদের রাক্ষসের কবলে ফেলে কে চ’লে যেতে পারে? হিড়িম্বা বললে, এঁদের জাগান, আমি সকলকে রক্ষা করব। ভীম বললেন, এঁরা সুখে নিদ্রা যাচ্ছেন, আমি এখন জাগাতে পারব না। রাক্ষস বা যক্ষ গন্ধর্ব সকলকেই আমি পরাস্ত করতে পারি। তুমি যাও বা থাক বা তোমার ভ্রাতাকে এখানে পাঠিয়ে দাও।

 ভগিনীর ফিরতে বিলম্ব হচ্ছে দেখে হিড়িম্ব দ্রুতবেগে পাণ্ডবদের কাছে আসতে লাগল। হিড়িম্বা ভীমকে বললে, আপনারা সকলেই আমার নিতম্বে আরোহণ করুন, আমি আকাশপথে আপনাদের নিয়ে যাব। ভীম বললেন, তোমার ভয় নেই, মানুষ বলে আমাকে অবজ্ঞা ক’রো না। হিড়িম্ব এসে দেখলে, তার ভগিনী সন্দরী নারীর রূপ ধ’রে সূক্ষ্ম বসন, অলংকার এবং মাথায় ফুলের মালা পরেছে। সে অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে বললে, তুই অসতী, এদের সঙ্গে তোকেও বধ করব। এই বলে সে পাণ্ডবদের দিকে ধাবিত হ’ল। ভীম বললেন, রাক্ষস, এঁদের জাগিয়ে কি হবে, আমার কাছে এস। তোমার ভগিনীর দোষ কি, ইনি নিজের বশে নেই, শরীরের ভিতরে যে অনঙ্গদেব আছেন তাঁরই প্রেরণায় ইনি আমার প্রতি আসক্ত হয়েছেন। তার পর ভীম আর হিড়িম্বের ঘোর বাহুযুদ্ধ আরম্ভ হ’ল। পাছে দ্রাতাদের নিদ্রাভঙ্গ হয় সেজন্য ভীম রাক্ষসকে দূরে টেনে নিয়ে গেলেন, কিন্তু যুদ্ধের শব্দে সকলেই জেগে উঠলেন।

 কুন্তী হিড়িম্বাকে বললেন, বরবর্ণিনী, সুরকন্যাতুল্য তুমি কে? বনের দেবতা, না অপ্সরা? হিড়িম্বা নিজের পরিচয় দিয়ে জানালে যে ভীমের প্রতি তার অনুরাগ হয়েছে। অর্জুন ভীমকে বললেন, আপনি বিলম্ব করবেন না, আমাদের যেতে হবে। ঊষাকাল আসন্ন, সেই রৌদ্র মুহূর্তে রাক্ষসরা প্রবল হয়। ওই রাক্ষসটাকে নিয়ে খেলা করবেন না, ওকে শীঘ্র মেরে ফেলুন। তখন ভীম হিড়িম্বকে তুলে ধ’রে ঘোরাতে লাগলেন এবং তার পর ভূমিতে ফেলে নিষ্পিষ্ট ক’রে বধ করলেন।

 অর্জুন বললেন, আমার মনে হয় এখান থেকে নগর বেশী দূরে নয়, আমরা শীঘ্র সেখানে যাই চলুন, দুর্যোধন আমাদের সন্ধান পাবে না। ভীম বললেন,