পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৮
মহাভারত

রাক্ষসজাতি মোহিনী মায়ার বলে শত্রুতা করে, হিড়িম্বা, তুমিও তোমার দ্রাতার পথে যাও। যুধিষ্ঠির বললেন, তুমি স্ত্রীহত্যা ক’রো না, এ আমাদের অনিষ্ট করতে পারবে না। হিড়িম্বা কুন্তীকে প্রণাম ক’রে করজোড়ে বললে, আর্যা, আমি স্বজন ত্যাগ ক’রে আপনার এই বীর পুত্রকে পতিরূপে বরণ করেছি, আমাকে প্রত্যাখ্যান করলে আমি বাঁচব না, আমাকে মুগ্ধা ভক্তিমতী ও অনুগতা জেনে দয়া করুন। আপনার পুত্রের সঙ্গে আমাকে মিলিত করে দিন। আমি ওঁকে নিয়ে ইচ্ছানুসারে বিচরণ করব, তার পর আবার এনে দেব, আমাকে বিশ্বাস করুন। আমাকে মনে মনে ভাবলেই আমি উপস্থিত হব।

 যুধিষ্ঠির বললেন, হিড়িম্বা, তোমার কথা অসংগত নয়, কিন্তু তোমাকে এই নিয়ম পালন করতে হবে।—ভীম স্নান আহ্যিক ক’রে তোমার সঙ্গে মিলিত হবেন এবং সূর্যাস্ত হ’লেই আমাদের কাছে ফিরে আসবেন। ভীম হিড়িম্বাকে বললেন, রাক্ষসী, শোন, যত দিন তোমার পুত্র না হয় তত দিনই আমি তোমার সঙ্গে থাকব। হিড়িম্বা সম্মত হয়ে ভীমকে নিয়ে আকাশপথে চ’লে গেল।

 কিছুকাল পরে হিড়িম্বার একটি ভীষণাকার বলবান পুত্র হ’ল, তার কর্ণ সূক্ষ্মাগ্র, দন্ত তীক্ষ্ণ, ওষ্ঠ তাম্রবর্ণ, কণ্ঠস্বর ভয়ানক। রাক্ষসীরা গর্ভবতী হয়েই সদ্য প্রসব করে। হিড়িম্বার পুত্র জন্মাবার পরেই যৌবনলাভ ক’রে সর্বপ্রকার অস্ত্রপ্রয়োগে দক্ষ হ’ল। তার মাথা ঘটের মত এবং চুল খাড়া সেজন্য হিড়িম্বা পুত্রের নাম রাখলে ঘটোৎকচ। কুন্তী ও পাণ্ডবদের প্রণাম ক’রে সে বললে, আমাকে কি করতে হবে আজ্ঞা করুন। কুন্তী বললেন, বৎস, তুমি কুরুকুলে জন্মেছ, তুমি সাক্ষাৎ ভীমের তুল্য এবং পঞ্চপাণ্ডবের জ্যেষ্ঠ পুত্র। তুমি আমাদের সাহায্য করো। ঘটোৎকচ বললে, প্রয়োজন হ’লেই আমি উপস্থিত হব। এই ব’লে সে বিদায় নিয়ে উত্তর দিকে চ’লে গেল।

 পাণ্ডবরা জটা বল্কল মৃগচর্ম ধারণ ক’রে তপস্বীর বেশে মৎস্য, ত্রিগর্ত, পাঞ্চাল ও কীচক দেশের ভিতর দিয়ে চললেন। যেতে যেতে পিতামহ ব্যাসের সঙ্গে তাঁদের দেখা হ’ল। ব্যাস বললেন, আমি তোমাদের সমস্ত বৃত্তান্ত জানি, বিষণ্ণ হয়ো না, তোমাদের মঙ্গল হবে। যত দিন আমার সঙ্গে আবার দেখা না হয় তত দিন তোমরা নিকটস্থ ওই নগরে ছদ্মবেশে বাস কর। এই কথা ব’লে ব্যাস পাণ্ডবগণকে একচক্রা নগরে এক ব্রাহ্মণের গৃহে রেখে এলেন।