পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭০
মহাভারত

 কুন্তী জিজ্ঞাসা করলেন, আপনাদের দুঃখের কারণ কি বলনে, যদি পারি তো দূর করতে চেষ্টা করব। ব্রাহ্মণ বললেন, এই নগরের নিকট বক নামে এক মহাবল রাক্ষস বাস করে, সেই এদেশের প্রভু। আমাদের রাজা তাঁর রাজধানী বেত্রকীয়গৃহে থাকেন, তিনি নির্বোধ ও দুর্বল, প্রজারক্ষার উপায় জানেন না। বক রাক্ষস এই দেশ রক্ষা করে, তার মূল্যস্বরূপ আমাদের প্রতিদিন একজন লোককে পাঠাতে হয়, সে প্রচুর অন্ন ও দুই মহিষ সঙ্গে নিয়ে যায়। বক সেই মানুষ মহিষ আর অন্ন ভোজন করে। আজ আমার পালা, আমার এমন ধন নেই যে অন্য কোনও মানুষকে কিনে নিয়ে রাক্ষসের কাছে পাঠাই। অগত্যা আমি স্ত্রী পুত্র কন্যাকে নিয়ে তার কাছে যাব, আমাদের সকলকেই সে খেয়ে ফেলুক।

 কুন্তী বললেন, আপনি দুঃখ করবেন না, আমার পাঁচ পুত্রের একজন রাক্ষসের কাছে যাবে। ব্রাহ্মণ বললেন, আপনারা আমার শরণাগত ব্রাহ্মণ অতিথি আমাদের জন্য আপনার পুত্রের প্রাণনাশ হ’তে পারে না। কুন্তী বললেন, আমার পুত্র বীর্যবান মন্ত্রসিদ্ধ ও তেজস্বী, সে রাক্ষসের খাদ্য পৌঁছিয়ে দিয়ে ফিরে আসবে। কিন্তু আপনি কারও কাছে প্রকাশ করবেন না, কারণ মন্ত্রশিক্ষার জন্য লোকে আমার পুত্রের উপর উপদ্রব করবে। কুন্তীর কথা শুনে ব্রাহ্মণ অতিশয় হৃষ্ট হলেন। এমন সময় যুধিষ্ঠিরাদি ভিক্ষা নিয়ে ফিরে এলেন। ভীম রাক্ষসের কাছে যাবেন শুনে যুধিষ্ঠির মাতাকে বললেন, যাঁর বাহুবলের ভরসায় আমরা সুখে নিদ্রা যাই, যাঁর ভয়ে দুর্যোধন প্রভৃতি বিনিদ্র থাকে যিনি জতুগৃহ থেকে আমাদের উদ্ধার করেছেন, সেই ভীমসেনকে আপনি কোন্ বুদ্ধিতে ত্যাগ করছেন? কুন্তী বললেন, যুধিষ্ঠির, ভীমের বল অযুত হস্তীর সমান, তার তুল্য বলবান কেউ নেই। এই ব্রাহ্মণের গৃহে আমরা সুখে নিরাপদে বাস করছি, এঁর প্রত্যুপকার করা আমাদের কর্তব্য।

 রাত্রি প্রভাত হ’লে ভীম অন্ন নিয়ে বক রাক্ষস যেখানে থাকে সেই বনে গেলেন এবং তার নাম ধরে ডাকতে লাগলেন। সে অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে মহাবেগে ভীমের কাছে এসে দেখলে, ভীম অন্ন ভোজন করছেন। বক বললে, আমার অন্ন আমার সম্মুখেই কে খাচ্ছে, কোন্ দুর্বদ্ধির যমালয়ে যেতে ইচ্ছা হয়েছে? ভীম মুখ ফিরিয়ে হাসতে হাসতে খেতে লাগলেন। রাক্ষস দুই হাত দিয়ে ভীমের পিঠে আঘাত করলে, কিন্তু ভীম গ্রাহ্য করলেন না। রাক্ষস একটা গাছ নিয়ে আক্রমণ করতে এল। ভীম ভোজন শেষ ক’রে আচমন ক’রে বাঁ হাতে রাক্ষসের নিক্ষিপ্ত গাছ ধ’রে ফেললেন। তখন দুজনে বাহুযুদ্ধ হ’তে লাগল, ভীম বক রাক্ষসকে ভূমিতে