পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আদিপর্ব
৭১

ফেলে নিষ্পিষ্ট ক’রে বধ করলেন। রাক্ষসের চিৎকার শুনে তার আত্মীয় পরিজন ভয় পেয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এল। ভীম তাদের বললেন, তোমরা আর কখনও মানুষের হিংসা করবে না, যদি কর তবে তোমাদেরও প্রাণ যাবে। রাক্ষসরা ভীমের আদেশ মেনে নিলে। তারপর ভীম রাক্ষসের মৃতদেহ নগরের দ্বারদেশে ফেলে দিয়ে অন্যের অজ্ঞাতসারে ব্রাহ্মণের গৃহে ফিরে এলেন। নগরবাসীরা আশ্চর্য হয়ে ব্রাহ্মণের কাছে সংবাদ নিতে গেল। ব্রাহ্মণ বললেন, একজন মন্ত্রসিদ্ধ মহাত্মা আমাদের রোদনে দয়ার্দ্র হয়ে আমার পরিবর্তে রাক্ষসদের কাছে অন্ন নিয়ে গিয়েছিলেন, নিশ্চয় তিনিই তাকে বধ ক’রে সকলের হিতসাধন করেছেন।


॥ চৈত্ররথপর্বাধ্যায়॥

২৯। ধৃষ্টদ্যুম্ন ও দ্রৌপদীর জন্মবৃত্তান্ত—গন্ধর্বরাজ অঙ্গারপর্ণ

 কিছুকাল পরে পাণ্ডবদের আশ্রয়দাতা ব্রাহ্মণের গৃহে অন্য এক ব্রাহ্মণ অতিথি রূপে উপস্থিত হলেন। ইনি বিবিধ উপাখ্যান এবং নানাদেশের আশ্চর্য বিবরণের প্রসঙ্গে বললেন, পাঞ্চালরাজকন্যা দ্রৌপদীর স্বয়ংবর হবে। পাণ্ডবগণ সবিশেষ জানতে চাইলে তিনি এই ইতিহাস বললেন।—

 দ্রোণাচার্যের নিকট পরাজয়ের পর দ্রুপদ প্রতিশোধ ও পুত্রলাভের জন্য অত্যন্ত ব্যগ্র হলেন। তিনি গঙ্গা ও যমুনার তীরে বিচরণ করতে করতে একটি ব্রাহ্মণবসতিতে এলেন। সেখানে যাজ ও উপযাজ নামক দুই ব্রহ্মর্ষি বাস করতেন। পাদসেবায় উপযাজকে তুষ্ট করে দ্রুপদ বললেন, আমি আপনাকে দশ কোটি গো দান করব, আপনি আমাকে এমন পুত্র পাইয়ে দিন যে দ্রোণকে বধ করবে। উপযাজ সম্মত হলেন না, তথাপি দ্রুপদ তাঁর পরিচর্যা করতে লাগলেন। এক বৎসর পরে উপযাজ বললেন, আমার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা যাজ শুচি অশুচি বিচার করেন না, আমি তাঁকে ভূমিতে পতিত ফল তুলে নিতে দেখেছি। ইনি গুরুগৃহে বাসকালে অন্যের উচ্ছিষ্ট ভিক্ষান্ন ভোজন করতেন। আমার মনে হয় ইনি ধন চান, আপনার জন্য পুত্রেষ্টি যজ্ঞ করবেন। যাজের প্রতি অশ্রদ্ধা হ’লেও দ্রুপদ তাঁর কাছে গিয়ে প্রার্থনা জানালেন। যাজ সম্মত হলেন এবং উপযাজকে সহায়রূপে নিযুক্ত করলেন।

 যজ্ঞ শেষ হ’লে যাজ দ্রুপদমহিষীকে ডেকে বললেন, রাজ্ঞী, আসুন, আপনার দুই সন্তান উপস্থিত হয়েছে। মহিষী বললেন, আমার মুখপ্রক্ষালন আর স্নান