পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭২
মহাভারত

হয় নি, আপনি অপেক্ষা করুন। যাজ বললেন, যজ্ঞাগ্নিতে আমি আহুতি দিচ্ছি, উপযাজ মন্ত্রপাঠ করছেন, এখন তা থেকে অভীষ্টলাভ হবেই, আপনি আসুন বা না আসুন। যাজ আহুতি দিলে যজ্ঞাগ্নি থেকে এক অগ্নিবর্ণ বর্মমুকুটভূষিত খড়্‌গধনুর্বাণধারী কুমার সগর্জনে উত্থিত হলেন। পাঞ্চালগণ হৃষ্ট হয়ে সাধু সাধু বলতে লাগল, আকাশবাণী হ’ল—এই রাজপুত্র দ্রোণবধ ক’রে রাজার শোক দূর করবেন। তারপর যজ্ঞবেদী থেকে কুমারী পাঞ্চালী উঠলেন, তিনি সুদর্শনা, শ্যামবর্ণা, পদ্মপলাশাক্ষী, কুঞ্চিতকৃষ্ণকেশী, পীনপয়োধরা, তাঁর নীলোৎপলতুল্য সৌরভ এক ক্রোশ দূরেও অনুভূত হয়। আকাশবাণী হ’ল—সর্ব নারীর শ্রেষ্ঠা এই কৃষ্ণা হ’তে ক্ষত্রিয়ক্ষয় এবং কুরুবংশের মহাভয় উপস্থিত হবে। দ্রুপদ ও তাঁর মহিষী এই কুমার-কুমারীকে পুত্রকন্যা রূপে লাভ ক’রে অতিশয় সন্তুষ্ট হলেন। ধৃষ্ট (প্রগল্‌ভ) ও দ্যুম্ন (দ্যুতি, যশ, বীর্য, ধন) সমন্বিত এই কারণে কুমারের নাম ধৃষ্টদ্যুম্ন হ’ল। শ্যাম বর্ণের জন্য এবং আকাশবাণী অনুসারে কুমারীর নাম কৃষ্ণা হ’ল। দৈব অনিবার্য এই জেনে এবং নিজ কীর্তি রক্ষার জন্য দ্রোণাচার্য ধৃষ্টদ্যুম্নকে স্বগৃহে এনে অস্ত্রশিক্ষা দিলেন।

 এই বৃত্তান্ত শুনে পাণ্ডবগণ বিষণ্ণ হলেন। কুন্তী যুধিষ্ঠিরকে বললেন, আমরা এই ব্রাহ্মণের গৃহে বহুকাল বাস করেছি, এদেশে যে রমণীয় বন-উপবন আছে তাও দেখা হয়েছে, এখন ভিক্ষাও পূর্বের ন্যায় যথেষ্ট পাওয়া যাচ্ছে না। যদি তোমরা ভাল মনে কর তবে পাঞ্চাল দেশে চল। পাণ্ডবগণ সম্মত হলেন। সময়ে ব্যাস পুনর্বার তাঁদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এলেন। নানা বিচিত্র কথাপ্রসঙ্গে তিনি বললেন, কোনও এক ঋষির একটি পরমা সুন্দরী কন্যা ছিল, পূর্বজন্মের কর্মদোষে তার পতিলাভ হয় নি। তার কঠোর তপস্যায় তুষ্ট হয়ে মহাদেব এসে বললেন, অভীষ্ট বর চাও। কন্যা বার বার বললেন, সর্বগুণান্বিত পতি কামনা করি। মহাদেব বললেন, তুমি পাঁচ বার পতি চেয়েছ, এজন্য পরজন্মে তোমার পাঁচটি ভরতবংশীয় পতি হবে। সেই দেবরূপিণী কন্যা কৃষ্ণা নামে দ্রুপদের বংশে জন্মেছে, সেই তোমাদের পত্নী হবে। তোমরা পাঞ্চালনগরে যাও, দ্রুপদকন্যাকে পেয়ে তোমরা সুখী হবে।

 পাণ্ডবরা পাঞ্চালদেশে যাত্রা করলেন। এক অহোরাত্র পরে তাঁরা সোমাশ্রয়ণ তীর্থে গঙ্গাতীরে এলেন। অন্ধকারে পথ দেখবার জন্য অর্জুন একটি জ্বলন্ত