( ১১৫ ) করিবার নিমিত্ত রাজবল্লভ ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রদেশস্থ পণ্ডিতমণ্ডলীর নিকট দূত প্রেরণ করিলেন। প্রেরিত দূত কাশী, কাঞ্চী, মিথিল প্রভৃতি নানা স্থান হইতে অমুকুল মত সংগ্ৰহ করিয়া অবশেয়ে নবদ্বীপে সমাগত হইল। এই সময় নবদ্বীপে বহুসংখ্যক পণ্ডিত বাস করিতেন। সমগ্র বঙ্গদেশের মধ্যে এক মাত্র ঐ স্থলেই বিবিধ শাস্ত্রের আলোচনা হইত এবং বঙ্গের বিভিন্ন প্রদেশ হইতে বিদ্যার্থিগণ নবদ্বীপে পাঠ সমাপন করিয়া উপাধি ধারণ করিতেন। যিনি নবদ্বীপে গিয়া পাঠ সমাপন না করিতেন, তিনি দেশমধ্যে পণ্ডিতপদবাচ্য হইতেন না। নবদ্বীপ হইতে পণ্ডিতমণ্ডলী কর্তৃক যে অভিমত প্রচারিত হইত, তাহা অশিষ্ট হইলেও বঙ্গদেশে বেদবাক্যের দ্যায় অত্রাস্ত বলিয়া প্রতিপালিত হইত। এই সমস্ত পণ্ডিতগণ সুপ্রসিদ্ধ রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের আশ্রিত ছিলেন । রাজবল্লভের সহিত কৃষ্ণচন্দ্রের সৌহাৰ্দ্দ ছিল, সুতরাং তিনি মনে করিয়াছিলেন যে কৃষ্ণচন্দ্রের সাহায্যে নবদ্বীপ হইতে বিধবাবিবাহ বিষয়ে অনুকূল মত সংগ্ৰহ করিতে পারিবেন। কিন্তু মুচতুর কৃষ্ণচন্দ্রই রাজবল্লভের অভীষ্টসিদ্ধিবিষয়ে অলঙ্ঘ্য অন্তরায় হইয়া উঠিলেন। রাজবল্লভের প্রেরিত লোক নবদ্বীপে উপস্থিত হইলে, কৃষ্ণচন্দ্র তাহাদিগকে সাদরে গ্রহণ করিয়া যথাসাধ্য সাহায্যদানে প্রতিশ্রত হইলেন। অতঃপর তিনি গোপনে পণ্ডিতমণ্ডলীকে আহবান করিয়া তাহাদিগের নিকট জ্ঞাত হইলেন যে, বিধবাবিবাহ শাস্ত্রসন্মত। বৈদ্যবংশীয় রাজবল্লভকর্তৃক এইরূপ একটি গুরুতর সমাজসংস্কার সাধিত হইবে, তাহ কৃষ্ণচন্দ্রের অভিপ্রেত হইল না ; তিনি উপস্থিত পণ্ডিতগণকে বলিলেন, আগামী কল্য রাজবল্লভের দূত আমার সভায় সমাগত হইলে, আপনার বিধবাবিবাহ শাস্ত্রবিরুদ্ধ বলিয়া অভিমত প্রকাশ করিবেন এবং আমি এ বিষয়ে আপনাদিগকে অমুকুল মত প্রদান করিবার নিমিত্ত পুনঃ পুনঃ
পাতা:মহারাজ রাজবল্লভ সেন ও তৎসমকালবর্ত্তী বাঙ্গলার ইতিহাসের স্থূল স্থূল বিবরণ.djvu/১২২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।