পাতা:মাইকেল মধুসূদন দত্তের জীবন-চরিত - যোগীন্দ্রনাথ বসু.pdf/১৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শিক্ষাবস্থা-কবিতা রচনার অভ্যাস । à è à মধুসূদনের বিশ্বাস ছিল, ইংলণ্ডে গমন করিতে না পারিলে তাহার কবি-শক্তি বিকাশ প্ৰাপ্ত হইবে না । কিন্তু তাহার জীবনে ইহার বিপরীত ফলই লক্ষিত হইয়াছে। মেঘনাদ, বীরাঙ্গনা, এবং ব্ৰজাঙ্গনা প্ৰভৃতি র্তাহার উৎকৃষ্ট গ্রন্থগুলি, সমস্তই, তাহার ইংলণ্ড গমনের পূর্বে লিখিত হইয়াছিল। ইংলণ্ড হইতে প্ৰত্যাগমনের পর, তিনি যে দুই একখানি গ্ৰন্থ লিখিয়াছিলেন, তাহা তাহার গৌরব রক্ষা করিতে পারে নাই। বিদেশীয় শিক্ষার ফলে ভারতসন্তান, কেমন, স্বদেশের কথা বিশ্বত হইয়া, বিদেশের সকলই সুন্দর দেখিতে শিক্ষা করিতেছেন, তাহার ইংলণ্ড-গমন বিষয়ক কবিতা হইতে তাহারও প্ৰমাণ প্ৰাপ্ত হওয়া যাইতে পারে । তিনি লিখিয়াছিলেন যে, “যে দেশ স্বাধীনতার বিলাস-ভূমি, যেখানে লোকে । প্ৰতিভার সমাদর করিতে জানে, এবং যেখানে বিজ্ঞানের উন্নতি হইতেছে, সেই দেশ দেখিবার জন্য আমার হৃদয় ব্যাকুল।” এ সকল কথায় আপত্তি নাই ; কিন্তু যখন আবার তাহার মুখে শুনিতে পাই, যে “যে দেশে প্রকৃতির মুখ অতুল সৌন্দর্ঘ্যে পূর্ণ, যেখানে শুামল উপত্যক এবং উচ্চ পর্বতমালা বিরাজিত রহিয়াছে, সেই দেশ দেখিবার জন্য আমার হৃদয় উৎসুক ;” তখন আমাদিগের মনে হয়, পাশ্চাত্য শিক্ষায় আমাদিগকে কি দৃষ্টিহীন করিয়াই ফেলিতেছে। নহিলে হিমাচল-কিরীটিনী ভারতভুমির সন্তান, ইংলণ্ডের ক্ষুদ্র শৈলমালা দর্শনের জন্য, এরূপ ব্যাকুলতা প্ৰকাশ করিবেন কেন ? মধুসূদনের, ইংলণ্ড-গমন সম্বন্ধীয় কবিতা হইতে পাঠক, হয়ত, মনে করিতে পারেন যে, তিনি পঠদ্দশায় স্বদেশের ও স্বজাতির প্রতি বীতরাগ হইয়াছিলেন ; কিন্তু বাস্তবিক তাহা নয়। ইংলণ্ড গমনের জন্য ব্যাকুলত প্ৰকাশ এবং আহার, ব্যবহারে যুরোপীয় সমাজের অনুকরণ করিলেও অন্তরে স্বদেশের প্ৰতি তাহার চিরদিন প্ৰগাঢ় অনুরাগ ছিল । তাকার ব্যবহারে যে কোন অন্তর্নিহিত স্বদেশানুরাগ ।