পাতা:মাইকেল মধুসূদন দত্তের জীবন-চরিত - যোগীন্দ্রনাথ বসু.pdf/৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাল্য-জীবন । କର অন্যান্য অনেক সদগুণের ন্যায় আত্মসংযমও, বাল্য হইতে শিক্ষা না করিলে, পরিণত বয়সে শিক্ষা করা দুরূহ হইয়া দাঁড়ায় ! দুৰ্ভাগাক্রমে, পিতামাতার ও আত্মীয়গণের অতিরিক্ত স্নেহবশতঃ, মধুসুদন শৈশবে • আত্মসংযম শিক্ষাব সুযোগ প্ৰাপ্ত হন নাই । সহৃদয়ত, বুদ্ধিমত্তা প্ৰভৃতি গুণ মধুসুদন যেমন তাহার পিতৃ-প্রকৃতি হইতে প্ৰাপ্ত হইয়াছিলেন, তাহার স্বাভাবিক সরল, উদ্যাল মন ও প্ৰেম-প্রবণ, কোমল হৃদয় তিনি তেমনই তাহার মাতৃ-প্ৰকৃতি হইতে লাভ করিয়াছিলেন । তাহার মাতার ন্যায় স্নেহপরায়ণ ও পরদুঃখকতবা রমণী, স্বভাব-কোমল বঙ্গ মহিলাদিগেরও মধ্যে, অধিক দেখিতে পাওয়া যায না । স্বামীব ন্যায় তিনিও মুক্তহস্তে দান করিতেন এবং আমোদ, আহলাদে অকাতরে অর্থব্যয় করিতেন । স্বামিসেবা তিনি পরম ধৰ্ম্ম বলিয়া মনে করিতেন ; কখনও কোন বিষয়ে তিনি স্বামীর প্রতিকূলবৰ্ত্তিনী হইতেন না। তাহার জীবদ্দশাতে রাজনারায়ণ দত্ত যদিও আর তিনটী বিবাহ করিয়াছিলেন ; তথাপি তিনি কখনও স্বামীব প্ৰতি অশ্রদ্ধা বা বিরাগ প্ৰদৰ্শন করেন। নাই । মধুসুদন মান্দ্ৰাজে গমন করিলে রাজনারাষণ দত্ত, পুনৰ্ব্বার বিবাহ করিতে ইচ্ছা করিয়া, তাহার নিকট বলিয়ছিলেন ; “দেখ আমাদিগের পুত্ৰটী ত আমাদিগকে ছাড়িয়া গেল, তোমার আর সন্তান হইবার আশা নাই, আমাদের জলপিণ্ডের উপায় কি হইবে ?” জাকুবী দাসী, শুনিয়া, অম্নানিমুখে বলিয়াছিলেন ; “তুমি পুনরায় বিবাহ কর, তোমার মঙ্গলেই আমার মঙ্গল ; যদি তোমার পুত্র জন্মে, তুমিও স্বৰ্গ-লাভের অধিকারী হইবে, আমিও হইব ।” বহুপত্নীক হইলেও রাজনারায়ণ দত্ত, এই সকল কারণে, জাকুবী দাসীকেই সর্বাপেক্ষা স্নেহ করিতেন, এবং সকল বিষয়ে তাহার মত লইয়া কাৰ্য্য করিতেন । মধুসূদন গ্ৰীষ্টধৰ্ম্ম গ্রহণ করিলে তিনি, তাহারই অনুরোপে, মধুসুদনকে বহুদিন প্রচুর পরিা মাতার প্রকৃতি ।