পাতা:মাইকেল মধুসূদন দত্তের জীবন-চরিত - যোগীন্দ্রনাথ বসু.pdf/৪৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মেঘনাদবধ-কাব্য । 8○○ উপবিষ্ট হইয়া, অনেক সময়, কিরূপ সহাস্য মুখে চিন্তানলে জীবন উৎসর্গ করিতেন, সাধবী প্ৰমীলার চিন্তারোহণে কবি তাহা বৰ্ণনা করিায়াছেন। ভারতবর্ষীয় সহমরণ-প্ৰথা এবং যুনানীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াকালীন সমর-সজ্জা উভয়ের সম্মিলনে কাব্যের এই অংশ রচিত হইয়াছে । আমরা তৃতীয় সর্গে বলিয়াছি যে, যিনি প্ৰমীলার-চরিত্রের মনোহারিত্বে বুঝিতে চান, তিনি যেন মেঘনাদবধের নবম সর্গ পাঠ করেন । শ্মশানশয্যায় উপবিষ্টা, নববিধবা পামীলার বিষাদিনী মূৰ্ত্তি না দেখিলে তৃতীয় সর্গের সেই রণরঙ্গিনী মূৰ্ত্তির গাম্ভীৰ্য্য অনুভব করিবার সম্ভাবনা নাই। প্ৰমীলার চিন্তারোহণেব ন্যায় গম্ভীর ও করুণভাবোদ্দীপক চিত্র বঙ্গসাহিত্যে আর কোথাও নাই। কবির বর্ণনা-গুণে সেই কল্পনাসৃষ্ট দৃশ্য, যেন প্ৰকৃত ঘটনার ন্যায়, আমাদিগের মানস চক্ষুর সম্মুখে উপস্থিত হয়। লঙ্কার সেই সমুদ্র-কুলবৰ্ত্তি শ্মশান, সেই শ্মশানস্তিত অশ্রুপূর্ণনয়ন রক্ষেীবালাগণ এবং তঁাহাদিগের মধ্যে নিম্প্রভ শশিকলার ন্যায় প্ৰমীলাকে আমরা প্ৰত্যক্ষের ন্যায় দর্শন করি । এই কি সেই প্ৰমীলা ? বসন্তসমাগমে মত্ত মাতঙ্গিনীর ন্যায় দৰ্পে যিনি, একদিন, রঘুসৈনিকদিগকে দলিত করিয়া, পতিপদ পূজা করিয়াছিলেন, এই কি সেই প্ৰমীলা ? প্ৰমীলার সেই রণপ্ৰিয়া সঙ্গিনীগণ, সেই ভীষণ সমর-সজা এবং সেই অগ্নিশিখাসদৃশী বড়বা। আজ এছ শ্মশান-ভূমিতেও তাহার অনুগমন করিয়াছিল। কিন্তু প্ৰমীলার সেই বিদুল্লতাসদৃশী প্ৰভা আজ কোথায়? প্ৰমীলার মুখে বাক্য নাই, অধরে হাস্য নাই, নয়নে জ্যোতি নাই ; প্ৰমীলার ললাটে সিন্দুরবিন্দু, কণ্ঠে পুষ্পদাম, করে সধবা-চিহ্ন কঙ্কণ ; প্ৰমীলা পতির পদতলে উপবিষ্ট ; “মৌনব্রতে ব্ৰতী বিধুমুখী ; পতির উদ্দেশে প্রাণ ও বরাঙ্গ ছাড়ি গেছে যেন, যখ পতি বিরাজেন এবে ; শুকাইলে তরুরাজ শুকায় রে লতা ।”