পাতা:মাইকেল মধুসূদন দত্তের জীবন-চরিত - যোগীন্দ্রনাথ বসু.pdf/৪৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 O জীবন-চরিত । “কাকা । তা এর নিমিত্ত আপনি এত কাতর হচ্ছেন কেন? আপনি পিতাকে এখানে একবার ডেকে আনুন গে। আমি তার পাদপদ্মে জন্মের মত বিদায় হই। কাক, আমি রাজপুত্রী, রাজকুলপতি ভীমসিংহের মেয়ে; আপনি বীর-কেশরী, আপনার ভাইঝি, আমি, মৃত্যুকে ভয় করি কি ?” যে ছায়াময়ী মূৰ্ত্তি ইহার পূর্বে একবার কৃষ্ণাকে দর্শন দান করিয়াছিলেন, কৃষ্ণার মনে হইল, সেন এখনও তিনি তঁহার শয়ন মন্দিরের দ্বারে দণ্ডায়মান রহিয়াছেন । সেইরূপ স্বৰ্গীয় সৌরভ তাহার নাসিকায় এবং সেইরূপ স্বৰ্গীয়বাদ্য র্তাহার কর্ণ-কুহরে। প্ৰবেশ করিতেছিল। কৃষ্ণ বিস্ময় বিস্ফারিতনেত্ৰে পিতৃব্যকে বলিলেন, “কাকা, একবার ঐ দুয়ারের দিকে চেয়ে দেখুন, আহা, কি অপরূপ রূপলাবণ্য ! উনিই পদ্মিনী সতী । উনি আমাকে এর আগে একবার দেখা দিয়েছিলেন ; জননি, তোমার দাসী এলো । দেখ ককা, এ মন্দির সহসা নন্দনকাননের সৌরভে পরিপূর্ণ হলো । আহা ! আমার কি সৌভাগ্য!” উন্মত্ত ভীমসিংহ এই সময় কৃষ্ণার অন্বেষণে র্তাহার মন্দিরে প্রবেশ করিলেন । কৃষ্ণা, পিতার চরণ-যুগলে নিপতিত হইয়া, বিদায় প্রার্থনা করিলেন ; কিন্তু জ্ঞানশূন্য রাজা কৃষ্ণার স্নেহ-সম্ভাষণে প্ৰত্যুত্তর দান করিলেন না। বালিকার হৃদয় ব্যথিত হইল ) সেই পূৰ্ব্বলক্ষিতা মূৰ্ত্তি, অঙ্গুলি সঙ্কেতে কৃষ্ণাকে আহবান করিয়া, তখনও বলিতেছিলেন ; “কুল, মান রক্ষার জন্য যে যুবতী আপন প্ৰাণ দান করে, সুরলোকে তাহার আদরের সীমা নাই।” কৃষ্ণ বলেন্দ্ৰসিংহের ভূমি-নিক্ষিপ্ত আসি পূর্বেই গ্ৰহণ করিয়াছিলেন। “জননি ! এই আমি এলেম”, এই বলিয়া কৃষ্ণ, সেই অসি লইয়া, সহসা আপনার বক্ষে আঘাত করিলেন, এবং ছিন্নমূল সুবৰ্ণলতার ন্যায় শয্যার উপর নিপতিত হইলেন । পাঠকের হৃদয়ে বিষাদ-রেখা অঙ্কিত করাই বিষাদান্ত নাটকের উদ্দেশ্য । মধুসূদন সে উদ্দেশ্য-সাধনে কতদূর কৃতকাৰ্য্য কৃষ্ণকুমারীর মৃত্যু।