পাতা:মাইকেল মধুসূদন দত্তের জীবন-চরিত - যোগীন্দ্রনাথ বসু.pdf/৬৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উপসংহার । R মনোহর প্রভাতের এবং এই সমুজ্জল মধ্যাহের পর কি ঘোরান্ধকারময়ী রজনী মধুসূদনের জীবনে সমুপস্থিত হইয়াছিল! যে যন্ত্রণায় তাহার শেষজীবন অতিবাহিত হইয়াছিল, তাহাব পুনরুল্লেখ নিম্প্রয়োজন । পৃথিবীর কীট পতঙ্গেরও মস্তক রাখিবার স্থান আছে, কিন্তু বঙ্গের নব্যকবি-শিরোমণির তাহা ছিল না । যে পরান্নভোজন ও পরাবসাথে শয়ন আমাদিগের নীতি-শাস্ত্রকারগণ মৃত্যুতুল্য বলিয়া বৰ্ণনা করিয়াছেন, মধুৰ সুন্দনের ভাগ্যে তাহারও অপেক্ষা অধিকতর ক্লেশ ঘটিয়াছিল । আশ্রয়ের অভাবে তাহাক পারগুহে বাস এবং নিজান্নের অভাবে তাহাকে পরদত্ত পিণ্ডে জীবন রক্ষা করিতে হইয়াছিল। তঁহার প্ৰিয়তম পুত্ৰ কন্যাগণ, কখনও উপবাসে, কখনও পৰ্য্যুষিত অন্নে দিনপাত করিত ; তিনি যােহাদিগকে প্ৰাণের অপেক্ষাও অধিক ভাল বাসিতেন, তাহাদিগের মধ্যে এক জন, বিনা পথ্যে, বিনা চিকিৎসায়, প্ৰাণত্যাগ করিলেন ; মৃত্যুশয্যায় শয়ন করিয়া এ সমস্তই তাহাকে দেখিতে হইয়াছিল । আর পরিশেষে, তিনি নিজে, রাজপথের ভিক্ষুকের ন্যায়, দাতব্য চিকিৎসালয়ে প্ৰাণত্যাগ করিালেন । র্যাহার রচনা পাঠ করিয়া সহস্ৰ সহস্ৰ নরনারী তাহাকে আত্মীয়ের অপেক্ষাও আত্মীয় বলিয়া মনে করিতেন, মৃত্যুশয্যায় চিকিৎসালয়ের শুশ্রুষাকারিণী ভিন্ন আর কেহ যে তাহার মুখে জলগণ্ডষে দিতে নিকটে ছিলেন না, ইহার অপেক্ষা অধিক শোচনীয় পরিণাম আর কি হইতে পারে ? সেই জন্যই আমরা বলিয়াছি যে, মধুসূদনের অবলম্বিত কোন চরিত্রের সহিত যদি তাহার নিজের জীবনের তুলনা করা সঙ্গত হয়, তবে তাহা মেঘনাদবধের রাবণেরই সহিত হইতে পারে। উভয়ের সর্বনাশের কারণও এক । যে আত্মসংযমের অভাব, সমস্ত সত্ত্বেও, রাবণকে অধঃপতিত করিয়াছিল, সেই আত্মসংযমের অভাব মধুসূদনের ও সৰ্ব্বনাশের কারণ হইয়াছিল। উভয়ের প্রকৃতিতে এইরূপ সাদৃশ্য ছিল বলিয়াই, বুঝি, তিনি মেঘনাদবধ-কাব্যে রাবণের ও তাঁহার পরিজিন 8O