পাতা:মাইকেল মধুসূদন দত্তের জীবন-চরিত - যোগীন্দ্রনাথ বসু.pdf/৬৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উপসংহার। V9) জননীর কথা স্মরণ হওয়াতে তিনি মাতার উদ্দেশে বলিলেন ; “মা, তোমার যোগ্য পুত্ৰ তোমার গৃহ কেমন সাজাইয়াছে, আমি তোমার অযোগ্য সন্তান, আমার দ্বারা তোমার কোন ইচ্ছাই পূর্ণ হয় নাই ; আমি কেৰল। তোমায় ক্লেশ দিয়াছি মাত্র।” বাহিরে কোট, হাটের কঠোর আবরণের অভ্যন্তরে বাঙ্গালি হৃদয়েব স্বাভাবিক কোমলতা মধুসূদনের অনেক কাৰ্ষ্যে এইরূপ প্ৰকাশিত হইত। খ্ৰীষ্টধৰ্ম্ম গ্রহণের পর যে দুই একবার তিনি সাগর দাড়ীতে গিয়াছিলেন, প্ৰত্যেক বারই, আত্মীয় ও প্রতিবাসিগণের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিয়া, অতিমধুর ব্যবহারে, সকলকে আপ্যায়িত করিয়াছিলেন । দেশের কোন আত্মীয়, কলিকাতায় আসিয়া, তাহার সঙ্গে সাক্ষাৎ করিলে তিনি পরম যত্নে তাহাকে অভ্যর্থনা করিতেন । মধুসূদনের চরিত্রে নৈতিক দুর্বলতা যথেষ্ট ছিল ; কিন্তু স্বার্থপরতা, ক্রুরতা, পরশ্ৰীকাতরতা প্ৰভৃতি নীচভাব এক বারেই ছিল না। উদার, সরলস্বভাব পুৰুষ কুপথগামী হইলে তাহার চরিত্রে যে সকল দোষ থাকিবার সম্ভাবনা, মধুসূদনের প্রকৃতিতে সেই সকল দোষই ছিল। মিতাচারে ও ইন্দ্ৰিয় সংযমে অভ্যস্ত হইলে তঁাহান স্নেহপ্ৰবণ হৃদয় গাৰ্হস্থ্যা-জীবনে অতি মধুময় ফল প্রসব করিত। মধুসূদনের জীবনের ইতিহাস অপূৰ্ব্ব শিক্ষাপ্ৰদ । প্ৰতিভা যতই সমুজ্জল হউক, আত্মসংযম না থাকিলে, তাহার পরিণাম যে কিরূপ শোচনীয় হইতে পারে, ইহা হইতে আমরা তাহা শিক্ষা করিতে পাবি। মনুষ্য যতই বিদ্বান ও বুদ্ধিমান হউন, ধৰ্ম্মভাব ব্যতীত যে জগতে শাস্তিত্ত্ব, প্ৰত্যাশা নাই, তাহার জীবন তাহারও দৃষ্টান্ত-স্থল। যাহারা প্ৰতিভার অভিমানে ধৰ্ম্মের ও নীতির প্ৰতি অবজ্ঞা প্ৰদৰ্শন করেন, এবং নিজের সুখ ও স্বার্থের জন্য পিতা, মাতা, সমাজ সকলের প্রতি ঔদাসীন্য প্ৰদৰ্শন করেন, তাহারা যেন মধুৰ সুন্দনের পরিণাম হইতে শিক্ষালাভ করেন। তরুণবয়সে নীতিশিক্ষার ও মধুসুদনেয় জীবনের উপদেশ ।