পাতা:মাঘোৎসবের উপদেশ - শিবনাথ শাস্ত্রী.pdf/২২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রেমের ধর্ম ঈশ্বরাদেশে ধর্মসাধনের অঙ্গ ব’লে করতেন। তিনি জীবনের সমুদয় কর্তব্য পালন করতেন, অথচ সর্বদা ব্ৰহ্মপ্রেমে বিভোর হয়ে থাকতেন। তিনি যেমন উপাসনা করেছেন, ধর্মসাধন করেছেন, তেমনি ঋণশোধ করেছেন, সন্তান-রক্ষা করেছেন, বিষয়-সম্পত্তি দেখেছেন । ঈশ্বরে শ্ৰীতি হবে, অথচ প্রীতির ধার ধারবে না, ঋণ ক’রে শোধ দিবে না, প্ৰতিশ্রুত হয়ে তাহা রাখবে না, চিন্তা বাক্য ও কাৰ্যে সংযত থাকবে না, এ হতে পারে না। আমাদের দেশের এক প্রকার ধর্ম আছে, তাহা ভাবুকতার ধর্ম। এই ধর্মের সেবকগণ ভাবে উন্মত্ত হন, গড়াগড়ি দেন, দেখতে দেখতে সপ্তম স্বর্গে ওঠেন, কিন্তু নীতির প্রতি দৃষ্টি থাকে না। ব্ৰাহ্মধর্ম এরূপ ধর্ম নহে। ইহার ভিতরে প্রেরক ঈশ্বর-প্ৰীতি, বাহিরে প্রকাশ মানব-সমাজে নীতি। আমি ভাবুকত চাই বটে, কিন্তু ভাবুকতাকেই ধর্ম মনে করি না। ধর্ম আধ্যাত্মিক, নীতির সঙ্গে তাহার ঘনিষ্ঠ যোগ আছে। ব্ৰাহ্মধর্ম মানবের ধর্মবুদ্ধিতে ঈশ্বরকে প্রতিষ্ঠিত দেখিতে উপদেশ দেন, সুতরাং ইহা নীতিপ্ৰধান। এদেশের পক্ষে এই নীতিপ্রধান ধর্মের বিশেষ প্ৰয়োজনীয়তা আছে । চতুর্থ কথা, যে হৃদয়ে প্রকৃত ঈশ্বর-শ্ৰীতি আছে, সেই হৃদয়ের অপর ঈশ্বর-প্রেমিকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগ বর্তমান। প্ৰেম সার্বভৌমিক । আপনাদের মধ্যেই দৃষ্টান্ত দেখুন। এখনি যদি হঠাৎ মহম্মদ এখানে আসেন, তবে কি তার দাড়ি আলখেল্লা দেখে ব্ৰাহ্মগণ র্ত্যকে পর ভাববেন ? যদি যীশু এসে উপস্থিত হন, তবে কি কেউ বলবেন, “তুমি জুডিয়া দেশের লোক, তুমি আমাদের কেউ নও” ? প্রেমের ধর্ম এ প্রকার নয়। সে ধর্ম উদার, সার্বভৌমিক, বিশ্বজনীন। বিধাতার আদেশ এই, জগতের জাতিসকল সমগ্র জগতের উৎপন্ন দ্রব্য ভাগ ক’রে নেবে । চীন দেশে চা জন্মে, তাই ব’লে কেবল চীনেরাই কি চা খাবে, আর কেউ থাবে না ? RRS