পাতা:মাঝির ছেলে - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মাঝির ছেলে
৫৮

 হাঁক ডাক শুনে কেবল নাগা নয়, আরও অনেকেই এল, যাদববাবুও এলেন।

 'কি হইছে?'

 রাগে কাঁপতে কাঁপতে মাধববাবু বললেন, 'কণুকে বাঁশবনে ডেকে নিয়ে গিয়ে ব্যাটা গায়ের গয়না ছাড়িয়ে নেবার চেষ্টা করছিল। সবাই মিলে হাঁ করে দাঁড়িয়ে রইলি, বাঁধ না ব্যাটাকে?'

 কণিকা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলল, 'গয়না নয় বাবা, আমার বেজীর ফাঁদ ভেঙ্গে দিয়েছে।'

 'বেজীর ফাঁদ?'-মাধববাবু থাতমত খেয়ে চুপ করে গেলেন।

 যাদববাবু বললেন, 'ওর বেজীর ফাঁদ ভাঙ্গছস ক্যানরে নাগা?'

 নাগা বলল, 'আইজ্ঞা, আমার বেজীর ফাঁদ, আমি বানাইছি।'

 ‘ভাঙ্গলি ক্যান?'

 নাগা চুপ।

 তখন যাদববাবু একটু হেসে বললেন, 'আইচ্ছা, তুই যা নাগা।'

 ‘ওকে কিছু বলবে না?’ মাধববাবু বললেন।

 যাদববাবু বললেন, 'কি কমু? কণুরে বেজী ধইরা দিবো বইলা নিজেই কষ্ট কইরা ফাঁদ বানাইছিলো, নিজেই আবার রাগ কইরা ভাইঙ্গা দিছে। আমাগো কওনের কি আছে?'

 মাধববাবু মুখ অন্ধকার করে একমুহুর্ত চুপ করে হইলেন। কিন্তু বাড়ির তিনি বড় কর্তা, রাগ হলে কারো ওপরে সেটা ঝাড়তে না পারলে কি তাঁর চলে? হঠাৎ তাই কণিকার গালে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিয়ে বললেন, ‘হারামজাদি, চাকরবাকরের সঙ্গে ইয়ার্কি দিতে যাস কেন?' বলে কোনদিকে না চেয়ে ঘরে চলে গেলেন।

 যাদববাবুর মনে হল, চড়টা যেন তাঁর গালে লেগেছে। কণিকাকে কাছে টেনে গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে বললেন, 'কাঁদিস না কণু, আমি তোরে বেজী দিমুনে।’

 'বেজী পাওয়া যাইবো কই, কেউ জানস?'

 পরেশ একধারে দাঁড়িয়েছিল, সে বলল, 'নকুইলার কাছে কর্তা।'