পাতা:মাঝির ছেলে - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
মাঝির ছেলে

 ডাঙ্গায় উঠেই যাদববাবু হাঁকলেন, ‘দেরি করস্‌ যে চাঁদ?’

 ‘চলেন কর্তা, চলেন।’

 তাড়াতাড়ি নেমে গিয়ে চাঁদ মাঝি যাদববাবুর পিছু পিছু গ্রামের দিকে চলতে আরম্ভ করল। বুড়ো নকুল মাঝি ডাঙ্গা থেকে কয়েক হাত তফাতে সরিয়ে একটা লগি পুঁতে নৌকা বেঁধে ফেলল।

 নাগা জিজ্ঞেস করল, ‘ক্যান আইছ মামু?’

 নকুল মাঝি জবাব দিল, ‘জাহাজে বড় কর্তা আসবো।’

 বড় কর্তা? সে আবার কে? নকুল মাঝি বিবরণ দিতে আরম্ভ করলে নাগার মনে পড়ে গেল। তাই বটে, মাধববাবু নামে যাদববাবুর একজন বড় ভাই আছেন বলে সে গুজব শুনেছে বটে। তিনি থাকেন কলকাতায়, কখনো দেশে আসেন না। এখন সপরিবারে কিছুদিনের জন্য দেশের বাড়িতে বাস করতে আসছেন।

 ‘কর্তা কই গেলেন মামু?’

 ‘কর্তা গেলেন হাত দেখাইতে,—তরে কমু কি নাগা, কর্তা য্যান হাত দেখানের লেইগা পাগল।’

 ‘হ’

 আটখামারের কৈলাস চক্রবর্তী নামকরা জ্যোতিষী; হাত দেখে মানুষকে চমক লাগিয়ে দেন। জাহাজ পৌঁছাবার আগে গ্রামে গিয়ে তাকে একবার হাত দেখাবেন বলে যাদববাবু শেষ রাত্রে করমতলা থেকে রওনা হয়ে এত আগে ঘাটে এসেছেন।

 ভাল কথা। বিদেশ থেকে দাদা আসুন, যাদববাবু হাত দেখান, যাত্রী আর মাল নিয়ে পাড়ি দেবার জন্য নৌকার মাঝিরা উৎসুক হয়ে জাহাজের পথ চেয়ে থাক, খিদে যে নাগার বাগ মানে না। এক মুঠো ডাল চিবিয়ে নিবিয়ে দেবার মত খিদে তো তার নয়। হারু মাঝি কোথায় গিয়েছিল, একটু পরে সে ফিরে আসামাত্র নাগা আবেদন জানাল, ‘পয়সাটা দিবা কাকা, মুড়ি খামু?’

 ‘জাহাজ আসুক।’

 ‘খিদা জানায়, কাকা?’