পাতা:মাঝির ছেলে - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মাঝির ছেলে
৮৮

গলার আওয়াজটাই সব চেয়ে বেশী স্পষ্ট। যাদববাবু ভেতর গিয়ে হৈ-চৈ থামিয়ে দিয়ে এলেন। গয়না ফিরে পাওয়া যাবে শুনে হৈ-চৈ কমল বটে, কিন্তু এমন একটা রহস্যময় ব্যাপার নিয়ে মেয়েদের উত্তেজিত আলোচনা কে থামাবে?

 যাদববাবু নাগাকে বললেন, ‘পরশারে ডাইকা আন নাগা।”

 নাগা হাতজোড় করে বলল, “আমি না কর্তা।”

 কিন্তু পরেশকে ডেকে আনবার দরকার হল না। “বাড়ী যাওয়ার জন্য রওনা হয়ে সে বৈঠকখানার সামনে দিয়ে যাচ্ছে দেখা গেল। যাদববাবু ডাক দিতে সে তাড়াতাড়ি ঘরে এসে ঢুকল এবং নিতাই সাহাকে দেখে মুখখানা তার হয়ে গেল বিবর্ণ।

 নিতাই বলল, “ডর নাই পরশা। কর্তা কিছু করবেন না কইছেন। টাকাটা শুধু ফেরত দিয়া তুই যেখানে খুশী যা গিয়া।”

 পরেশ ঘাড়া-হেঁট করে দাড়িয়ে থাকে।

 যাদববাবু বললেন, “চুপ কইরা থাকাস যে?

 “আমার কাছে নাই।”

 “কি করছস টাকা?”

 “নকুইলারে দিছি।”

 যাদববাবু ভুরু কুঁচকে বললেন, “নকুইলারে দিছস? নকুইলাও আছে নাকি তার লগে?”

 “না, বিয়ার পণ দিছি।”

 “ও, তার বিয়ার পণ দিছস। একশ টাকা পণ। তুই দেখি নবাব হইছস পরেশ??

 “তার কমে নকুইলা রাজী না কর্তা।”

 যাদববাবু মোটা চুরুট ধরালেন। পরেশের কাঁদ-কাঁদ মুখের দিকে তাকাতে তাকাতে বললেন, “নকুইলারে ডাইকা আন নাগা ’।

 নাগা এবারেও হাতজোড় করে বলল, “আমি না কর্তা।”

 বার বার নাগার অবাধ্যতায় ক্রুদ্ধ হয়ে তাকে ধমক দিতে গিয়ে যাদববাবু থেমে গেলেন। বোধ হয় তার মনে পড়ে গেল, কদিন আগে