পাতা:মাধবীকঙ্কণ - রমেশচন্দ্র দত্ত.pdf/৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সেই অন্ধকারে রোদন করিতেছিল। তিনি স্বপ্নে দেখলেন, সে অভাগিনী জেলেখা!

 নরেন্দ্রনাথ যখন জাগরিত হইলেন, তখন দেখিলেন, সূর্যোদয় হইয়াছে সূর্যের রশ্মিতে তিনি একটি প্রশস্ত বাজারের মধ্যে একটি পর্ণকুটীরের ধারে শুইয়া রহিয়াছেন। সূর্যের নবজাত রশ্মি তাঁহার মুখে পতিত হইয়াছে ও পথ, ঘাট, অট্টালিকা, দোকান, বাজার, বস্তী আলোকময় করিয়াছে। এ কোন শহর? এ কি বঙ্গদেশের রাজধানী রঙমহল? সুলতান সুজা কি অনুগ্রহ করিয়া তাঁহাকে বারাণসী হইতে এই স্থানে আনিয়াছেন? গত নিশায় কি তিনি এই ভূমিশয্যায় শুইয়া প্রাসাদ ও পরীর স্বপ্ন দেখিয়াছিলেন?

॥ তের॥

 নরেন্দ্রের বিস্ময়ের পরিসীমা রহিল না। সে স্থানটি তিনি পূর্বে কখনও দেখেন নাই। সেই স্থান একটি প্রকাণ্ড সরাইয়ের মত বোধ হইল। মধ্যস্থানে একটি প্রশস্ত প্রাঙ্গণ, তাহার চারিপার্শ্বে দ্বিতল হর্ম্যশ্রেণী, প্রত্যেক প্রকোষ্ঠেই দুই একটি করিয়া লোক আছে। সে সমস্ত লোক অধিকাংশই সম্ভ্রান্ত পারস্য, উসবেক, পাঠান বা হিন্দু বাণিজ্য-ব্যবসায়ী লোক, প্রথমে নগরে আসিয়া এই সরাইয়ে বাস করিয়া আছে। সকল লোক সরাইয়ে আসিলে নিশার দ্বার রুদ্ধ হইয়াছিল, এক্ষণে প্রাতঃকালে পুনরায় সরাইয়ের বহির্দ্বার উদ্‌ঘাটিত হইল, লোকে গমনাগমন করিতে লাগিল।

 এক বৃদ্ধ পারস্যদেশীয় সেখ একটি প্রকোষ্ঠে বসিয়া তামাক খাইতেছিল। নরেন্দ্র যাইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “সেখজী, এটি কোন্ স্থান? আমি এখানে নূতন আসিয়াছি, কিছু বুঝিতে পারিতেছি না।” সেখজী বলিলেন “বৎস, আমিও বাণিজ্যকর্মে এই শহরে কল্য আসিয়াছি, শহরের বিশেষ কিছু জানি না।”

 নরেন্দ্র। আপনি আমার অপেক্ষা অধিক জানেন। এই স্থানের কথা আমাকে কিঞ্চিৎ বলুন।

 সেখজী। আমি যথার্থই বলিতেছি, এ শহরের কিছুই জানি না। তবে শুনিলাম এই স্থানটি বেগম সাহেবার সরাই। সম্রাটের জ্যেষ্ঠা কন্যা বাদশা-বেগম শহর নূতন আগন্তুকের থাকিবার সুবিধার জন্য এই উৎকৃষ্ট সরাই নির্মাণ করিয়া দিয়াছেন। আমি সুমরকন্দ ও বোখারা দেখিয়াছি, দিরাজ ও ইস্পাহান দেখিয়াছি, কিন্তু এমন সুন্দর শহর দেখি নাই।

 নরেন্দ্র। এ শহরের নাম কি? বাদশা-বেগমই বা কে?

 বৃদ্ধ বণিক্ অনেকক্ষণ স্থির-দৃষ্টিতে যুবকের দিকে চাহিয়া একজন ভৃত্যকে ডাকিয়া

৩৫