পাতা:মাধবীকঙ্কণ - রমেশচন্দ্র দত্ত.pdf/৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বলিলেন,—“এ কাফের দেখিতেছি জ্ঞানশূন্য, পাগলটাকে তাড়াইয়া দাও, পাগলামী চড়িলেই এইক্ষণেই কি করিয়া বসিবে।”

 নরেন্দ্র গতিক মন্দ দেখিয়া সে স্থান হইতে সরিয়া গেলেন। পরে তিনি দেখিলেন, একজন পাঠান-স্ত্রী কতকগুলি ফলমুল লইয়া বিক্রয়ার্থ ধনী বণিকদিগের নিকট যাইতেছে। নরেন্দ্র তাহার কাছে যাইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন,—“বিবি, এ শহরের নাম কি, এ স্থানকেই বা লোকে কি বলে?” বৃদ্ধা বিস্মিত হইয়া ক্ষণেক নরেন্দ্রের প্রতি চাহিয়া থাকিয়া পরে উত্তর করিল,—“কাফের, আমার সে বয়স নাই, উপহাস করিতে হয়, অন্য স্থানে যাও, এ খুবসুরত মুখ দেখিলে অনেক খঞ্জনীও ভুলিয়া যাইবে।”

 নরেন্দ্রনাথ অপ্রতিভ হইলেন, দেখিলেন, একজন রাজপুত সৈনিক-পুরুষ দাড়াইয়া রহিয়াছেন, একজন ভৃত্য তাহা অশ্বের সেবা করিতেছে, সৈনিক সলজ্জ হইয়া ভৃত্যকে শীঘ্র কার্য সমাধা করিতে বলিতেছেন। নরেন্দ্র জিজ্ঞাসা করিলেন, “আমি এই স্থানে নূতন আসিয়াছি, এ স্থানটির নাম কি, জানি না। আপনি বোধ হয়, অনেকদিন এ স্থানে আছেন, আমাকে এ নগরের কথা সব কিছু বলিতে পারেন?”

 রাজপুত অনেকক্ষণ নরেন্দ্রের দিকে দেখিয়া উত্তর করিলেন,—“বালক, তোমার মুখ আমি পূর্বে দেখিয়াছি, তুমি বঙ্গদেশ হইতে আসিয়াছ, না? হাঁ, স্মরণ ইয়াছে, তুমি আমাকে ইহার মধ্যে বিস্মৃত হইয়াছ?”

 নরেন্দ্র তখন রাজপুতকে ভাল করিয়া দেখিয়া বলিলেন,—“না, “বিস্মৃত হই নাই, গজপতি, তুমি কাশীর যুদ্ধের পর আমার জীবন রক্ষা করিয়াছ, জীবন থাকিতে আমি তোমাকে বিস্মৃত হইতে পারি না।”

 দুইজন অনেকক্ষণ আলাপ-পরিচয় হইতে লাগিল। বিস্মিত হইয়া নরেন্দ্র জানিলেন যে, নগর হিন্দুস্থানের রাজধানী প্রসিদ্ধ দিল্পী নগরী: কথায় কথায় গজপতি প্রকাশ করিলেন,—“আমি মহারাজ জয়সিংহের নিকট হইতে কতিপয় পত্রাদি লইয়া মহারাজ, যশোবন্তসিংহের নিকট যাইতেছি। তিনি আপাতত উজ্জয়িনীতে আওরংজীবের সহিত যুার্থে গিয়াছেন, যুদ্ধ না হইতে হইতে আমি তথায় পৌছিতে পারলেই মঙ্গল। তুমি যদি ইচ্ছা কর তবে আমার সঙ্গে আইস, আমি মহারাজকে রলিয়া তোমাকে অশ্বারোহীর কার্যে নিযুক্ত করিয়া দিব। নরেন্দ্র সে দেশে বন্ধুহীন ও অর্থহীন, ভাবিয়া-চিন্তিয়া সেই প্রস্তাবে সম্মত হইলেন। তৎপরে দুইজনে দিল্পী নগরী ভ্রমণে বাহির হইলেন।

 মহাভারতে বিবৃত ইন্দ্রপ্রস্থ নগর যেস্থানে ছিল, ভারতবর্ষের শেষ হিন্দু-সম্রাট্, পৃথুরায়ের রাজধানী দিল্লী নগরী যেস্থানে ছিল, এই আখ্যায়িকা-বিবৃত সময়ের

৩৬