নরেন্দ্র আসিবামাত্র গজপতি উঠিয়া তাহার হস্তধারণ করিয়া ঈষৎ হাসিয়া বলিলেন, “দেখ দেখি, অস্ত্রগুলি পরিষ্কার হইয়াছে কি না?”
নরেন্দ্র। যথার্থই কি আপনি অন্য যুদ্ধে লিপ্ত হইবেন? দেওয়ানা ফকিরের কথা স্মরণ করুন!
গজপতি। সম্মুখে রণ করিয়া রাজপুত কখনও পশ্চাতে চাহে না, পিতা তেজসিংহ আমাকে এই শিক্ষা দিয়াছেন।
গজপতি আরও বলিলেন,—“নরেন্দ্র, এক যুদ্ধে আমি মহারাজা যশোবন্তুসিংহের উপকার করিয়াছিলাম, রাজা সন্তুষ্ট হইয়া আমাকে এই মুক্তাহার প্রদান করেন। সেই অবধি সকল যুদ্ধেই আমি এই হার পরিধান করিয়াছি। অদ্যকার যুদ্ধে তুমি নিস্তার পাইবে, এই হার রাজাকে দিও এবং বলিও, দেশে আমার দুইটি শিশুসন্তান আছে, হতভাগাদের মাতা নাই। মহারাজকে বলিও, যেন অনুগ্রহ করিয়া তাহাদিগের উপর কৃপাদৃষ্টি করেন, বালক রঘুনাথও কালে রাজার আজ্ঞায় পিতার ন্যায় সংগ্রামে জীবন দিতে সক্ষম হয়, ইহা অপেক্ষা অধিক মঙ্গল ইচ্ছা তাহার পিতা জানে না।
নরেন্দ্র নিস্তব্ধ হইয়া রহিলেন, তাহার নয়ন হইতে একবিন্দু জল পড়িল। গজপতির নয়নদ্বয় শুষ্ক ও অতিশয় উজ্জ্বল।
সহসা ভেরী-শব্দ শুনা যাইল, আওরংজীব সিপ্রা নদী পার হইবার উদ্যোগ করিতেছেন। গজপতি রণসজ্জা পরিধান করিয়া বাহিরে আসিলেন, লম্ফ দিয়া অশ্বে আরোহণ করিয়া তীরবেগে নদীমুখে চলিলেন।
নরেন্দ্রও নির্গত হইয়া যুদ্ধাভিমুখে চলিলেন।
যুদ্ধের পূর্বদিশায় রাজপুত-শিবির পাঠক দর্শন করিয়াছ। একবার সেই দিশায় মোগলশিবির দর্শন কর।
আওরংজীব পূর্বেই সেইস্থানে পৌছিয়াছিলেন, মোরাদের জন্য অপেক্ষা করিতেছিলেন দুই-তিন দিন পরে মোরাদ সসৈন্যে আওরংজীবের সহিত যোগ দিলেন, দুই-তিন দিনের মধ্যে যদি যশোবন্তসিংহ আওরংজীবকে আক্রমণ করিতেন, আওরংজীব অবশ্যই পরাস্ত হইতেন। কোন কোন ইতিহাসবেত্তা বলেন যে, আওরংজীবের অল্পমাত্র সৈন্য আছে এ কথা যশোবন্তসিংহ জানিতেন না, সেইজন্য আক্রমণ করেন নাই, আবার কেহ কেহ বলেন, মহানুভব রাজপুত সেনাপতি সে কথা জানিয়াও অল্পসংখ্যক সৈন্যের সহিত যুক্ত করা রীতিবিরুদ্ধ এইজন্যই অপেক্ষা করিয়াছিলেন।