অদ্য শ্রীশের অন্তঃকরণ কিছু আহ্লাদিত ছিল, তিনি রহস্য করিয়া বলিলেন, “আমি পান খাইব না।”
হেম। কেন?
শ্রীশ। তোমার মুখে কথা নাই কেন?
হেম। কি কথা কহিব বল, কহিতেছি। আগে পানটি খাও।
শ্রীশ। চিরকালই কি এই শুষ্ক মুখখানি দেখিব? কবে তোমার শরীর একটু সারিবে, কবে তোমার মুখখানি প্রফুল্ল দেখিব?
হেম। আমার শরীর ত এখন ভাল আছে।
শ্রীশ। হ্যা ঁঈশ্বরেচ্ছায় শরীর অল্প সারিয়াছে, কিন্তু মনে উল্লাস কৈ?
হেম। উল্লাস আবার কি?
শ্রীশ। মনের স্ফূর্তি কই? কবে তোমাকে সুখী দেখিব?
হেম। কৈ, আমার মনে ত কোন কষ্ট নাই। তবে দিদির কাছে একটি দুঃখের গল্প শুনিতেছিলাম, তাই একবিন্দু চক্ষের জল ফেলিয়াছিলাম।
শ্রীশ এ কথায়ও তুষ্ট হইলেন না; জিজ্ঞাসা করিলেন, “তোমার মুখখানি সহাস্য দেখিব কবে?”
হেম আর উত্তর করিতে পারিল না, ভূমির দিকেই চাহিয়া রহিল। হঠাৎ একটি কথা মনে পড়িল, এবার হেম অল্প হাসিয়া বলিল, “যবে তুমি আপন প্রতিজ্ঞা পালন করিবে।”
শ্রীশ। কি প্রতিজ্ঞা?
হেম। তীর্থযাত্রা।
শ্রীশচন্দ্র এবার কিঞ্চিৎ লজ্জিত হইলেন। হেমলতা ও শৈবলিনীর উপরোধে অনেকবার তীর্থযাত্রা করিবেন অঙ্গীকার করিয়াছেন, কিন্তু এ পর্যন্ত কোন উদ্যোগ করেন নাই। অদ্য হেমলতার কথায় কিঞ্চিৎ নিস্তব্ধ থাকিয়া পরে বলিলেন, “যদি যথার্থই তীর্থযাত্রা করিলে তোমার শরীর ও মন ভাল থাকে, তাহা হইলে আমি অবশ্যই যাইব। কল্য হইতেই আমি যাত্রার আয়োজন করিব।”
হেম পরিতৃপ্ত হইল। হেমকে একটু প্রফুল্ল দেখিয়া শ্রীশ আনন্দিত হইলেন, তিনি ক্ষীণ দেহলতা হৃদয়ে ধারণ করিয়া সস্নেহে হেমকে চুম্বন করিলেন।
উপরি-উক্ত ঘটনার অল্পদিন পরেই শ্রীশচন্দ্র সপরিবারে পশ্চিমযাত্রা করিলেন। গঙ্গাতীরস্থ সমস্ত তীর্থস্থান দেখিয়া অবশেষে মথুরা ও বৃন্দাবন যাইবার মানসে আগ্রায় পেীঁছিলেন। তথায় শ্রীশচন্দ্র প্রধান প্রধান হিন্দু-রাজাদিগের সহিত আলাপ করিলেন।