মেঘদূত
এখানে আজকাল খুব ঝড়বৃষ্টি বাদলের প্রাদুর্ভাব হয়েছে। এ জায়গাটা ঠিক ঝড়বৃষ্টির উপযুক্ত। সমস্ত আকাশময় মেঘ করে, অর্থাৎ সমস্ত আকাশটা দেখতে পাওয়া যায়, ঝড় সমস্ত মাঠটাকে আপনার হাতে পায়— বৃষ্টি মাঠের উপর দিয়ে চলে চলে আসে, দূরে থেকে বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখা যায়। বর্ষার অন্ধকার-ছায়াটাকে আপনার চতুর্দিকে প্রকাণ্ড ভাবে বিস্তৃত দেখতে পাওয়া যায়। খুব দুর থেকে হূহুঃ শব্দ করতে করতে ধুলো শুকনো-পাতা এবং ছিন্নবিচ্ছিন্ন স্তূপাকার মেঘ উড়িয়ে নিয়ে অকস্মাৎ আমাদের এই বাগানের উপর মস্ত একটা ঝড় এসে পড়ে— তার পরে, বড়ো বড়ো গাছগুলোর ঝুঁটি ধরে যে নাড়া দিতে থাকে সে এক আশ্চর্য দৃশ্য। ফলে-পরিপূর্ণ আমগাছ তার সমস্ত ডালপালা নিয়ে ভূমিতে লুটিয়ে লুটিয়ে পড়ে— কেবল শালগাছগুলো বরাবর খাড়া দাঁড়িয়ে আগাগোড়া থর্থর্ করে কাঁপতে থাকে। মাঠের মাঝখানে আমাদের বাড়ি— সুতরাং চতুর্দিকের ঝড় এরই উপরে এসে প’ড়ে ঘুরপাক খেতে থাকে; সেদিন তো একটা দরজা টুকরো টুকরো করে ভেঙে আমাদের ঘরের মধ্যে এসে উপস্থিত— যে কাণ্ডটা করলেন তার থেকে স্পষ্টই বোঝা গেল অরণ্যই এঁর উপযুক্ত স্থান— ভদ্রলোকের ঘরের মধ্যে প্রবেশ করবার মতো সহবত শিক্ষা হয় নি; অবিশ্যি, কার্ড পাঠিয়ে ঢোকা প্রভৃতি নব্যরীতি এঁর কাছ থেকে প্রত্যাশা করাই যেতে পারে না, কিন্তু ভিজে পায়ে ঢুকে গৃহস্থঘরেব জিনিসপত্র সমস্ত লণ্ডভণ্ড করে দেওয়াই কি সনাতন প্রথা? কিন্তু, এরকম অশিষ্টাচরণ সত্ত্বেও লেগেছিল ভালো।