পাতা:মানসী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/২৬০

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
২৫৮
পরিশিষ্ট

বহুকাল এরকম রীতিমত ঝড় দেখি নি। এখানকার লাইব্রেরিতে একখানা মেঘদূত আছে; ঝড় বৃষ্টি দুর্যোগে, রুদ্ধদ্বার গৃহপ্রান্তে তাকিয়া আশ্রয় করে দীর্ঘ অপরাহ্ণে সেইটি সুর করে করে পড়া গেছে— কেবল পড়া নয়- সেটার উপরে ইনিয়ে বিনিয়ে বর্ষার উপযোগী একটা কবিতা লিখেও ফেলেছি। মেঘদূত পড়ে কি মনে হচ্ছিল জান? বইটা বিরহীদের জন্যেই লেখা বটে— কিন্তু এর মধ্যে আসলে বিরহের বিলাপ খুব অল্পই আছে— অথচ সমস্ত ব্যাপারটা ভিতরে ভিতরে বিরহীর আকাঙ্ক্ষায় পরিপূর্ণ। বিরহাবস্থার মধ্যে একটা বন্দীভাব আছে কিনা— এইজন্যে বাধাহীন আকাশের মধ্যে মেঘের স্বাধীন গতি দেখে অভিশাপগ্রস্ত যক্ষ আপনার দুরন্ত আকাঙ্ক্ষাকে তারই উপরে আরোপণ ক’রে বিচিত্র নদী পর্বত বন গ্রাম নগরীর উপর দিয়ে আপনার অপার স্বাধীনতার সুখ উপভোগ করতে করতে ভেসে চলেছে। মেঘদূত কাব্যটা সেই বন্দীহৃদয়ের বিশ্বভ্রমণ। অবশ্য, নিরুদ্দেশ্য ভ্রমণ নয়, সমস্ত ভ্রমণের শেষে বহুদূরে একটি আকাঙ্ক্ষার ধন আছে, সেইখানে চরম বিশ্রাম— সেই একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য দূরে না থাকলে এই লক্ষ্যহীন ভ্রমণ অত্যন্ত শ্রান্তি ও ঔদাস্যের কারণ হত। কিন্তু, সেখানে যাবার তাড়াতাড়ি নেই— রয়ে বসে আপনার স্বাধীনতাথ সম্পূর্ণ উপভোগ করে— পথিমধ্যস্থিত বিচিত্র সৌন্দর্ধের কোনোটিকেই অনাদরে উল্লঙ্ঘন না ক’রে— রীতিমত Oriental রাজমাহাত্ম্যে যাওয়া যাচ্ছে। যক্ষের দিক থেকে দেখতে গেলে সেটা হয়তো ঠিক ‘ড্রামাটিক’ হয় না— একটা দক্ষিণে ঝড় উঠিয়ে একেবারে হুস করে সেখানে গিয়ে পড়লেই বোধ হয় তার পক্ষে ঠিক হত, কিন্তু তা হলে পাঠকদের অবস্থা কী হত বলো দেখি। আমরা এই বর্ষার দিনে ঘরে বন্ধ হয়ে আছি— মনটা উদাস হয়ে আছে— আমাদের একবার মেঘের মতো মহা স্বাধীনতা না দিলে অলকাপুরীর