পাতা:মানসী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/২৬১

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
মেঘদূত
২৫৯

অতুল ঐশ্বর্যের বর্ণনা কি তেমন ভালো লাগত? আজ বর্ষার দিনে মনে হচ্ছে পৃথিবীর কাজকর্ম সমস্ত রহিত হয়ে গেছে, কালের মস্ত ঘড়িটা বন্ধ, বেলা চলছে না। তবুও আমি বন্ধ হয়ে আছি, ছুটি পাচ্ছি নে। আজ এই কর্মহীন আষাঢ়ের দীর্ঘ দিনে পৃথিবীর সমস্ত অজ্ঞাত অপরিচিত দেশের মধ্যে বেরিয়ে পড়লে বেশ হয়— আজ তো আর কোনো দায়িত্বের কাজ কিছুই নেই, সংসারের সহস্র ছোটোখাটো কর্তব্য আজকের এই মহাদুর্যোগে স্থানচ্যুত হয়ে অদৃশ্য হয়েছে, আজ তেমন সুযোগ থাকলে কে ধরে রাখতে পারত! যে-সকল নদী গিরি নগরীর সুন্দর বহু প্রাচীন নাম বহুকাল থেকে শোনা যায় মেঘের উপরে বসে সেগুলো দেখে আসতুম। বাস্তবিক, কী সুন্দর নাম! নাম শুনলেই টের পাওয়া যায় কত ভালোবেসে এই নামগুলি রাখা হয়েছিল, এবং এই নামগুলির মধ্যে কেমন একটি শ্রী ও গাম্ভীর্য আছে। রেবা শিপ্রা বেত্রবতী গন্তীরা নির্বিন্ধ্যা, চিত্রকূট আম্রকূট বিন্ধ্য, দশার্ণ বিদিশা অবন্তী উজ্জয়িনী, এদেরই সকলের উপরে নববর্ষার মেঘ উঠেছে; এদেরই যুথীবনে বৃষ্টি পড়ছে এবং জনপদবধূরা কৃষিফলের প্রত্যাশায় স্নিগ্ধনেত্রে মেঘের দিকে চাচ্ছে। এদের জম্বুকুঞ্জের ফল পেকে আকাশের মেঘের মতো কালো হয়ে উঠেছে; দশার্ণ গ্রামের চতুর্দিকে কেয়াগাছের বেড়াগুলিতে ফুল ধরেছে, সেই ফুলগুলির মুখ সবে একটুখানি খুলতে আরম্ভ করেছে। মেঘাচ্ছন্ন রাত্রে উজ্জয়িনীর গৃহস্থঘরের ছাদের নীচে পায়রাগুলি সমস্ত ঘুমিয়ে রয়েছে; রাজপথের অন্ধকার এমনি প্রগাঢ় যে, সূচী দিয়ে ভেদ করা যায়। কবির প্রসাদে আজকের দিনে যদি মেঘের রথ পাওয়াই গেল, তা হলে এ-সব দেশ না দেখে কি যাওয়া যায়? যক্ষের যদি এতই তাড়া ছিল, তা হলে ঝোড়ো বাতাসকে কিম্বা বিদ্যুৎকে দূত করলেই ঠিক হত; যক্ষ যদি উনবিংশ শতাব্দীর হয় তা হলে টেলিগ্রাফের উল্লেখ