ক্রিটিক্কে না। এই বর্ষার অপরাহ্ণে ক্ষুদ্র আত্মকোটরের মধ্যে অবরুদ্ধ বন্দীদিগকে সৌন্দর্যের স্বাধীনতাক্ষেত্রে মুক্তি দিতে হবে। আজকের সমস্ত সংসার দুর্যোগের মধ্যে রুদ্ধ হয়ে অন্ধকার হয়ে, বিষন্ন হয়ে বসে আছে।
মেঘদূত পড়তে পড়তে আর-একটা চিন্তা মনে উদয় হয়:— সেকালেই বাস্তবিক বিরহী-বিরহিণী ছিল, এখন আর নেই। পথিকবধুদের কথা কাব্যে পড়া যায়, কিন্তু তাদের প্রকৃত অবস্থা আমরা ঠিক অনুভব করতে পারি নে। পোস্ট্-অফিস এবং রেলগাড়ি এসে দেশ থেকে বিরহ তাড়িয়েছে। এখন তো আর প্রবাস বলে কিছু নেই— তাই জন্যে বিরহিণীরা আর কেশ এলিয়ে আর্দ্রতন্ত্রী বীণা কোলে করে ভূমিতলে পড়ে থাকে না। ডেস্কের সামনে বসে চিঠি লিখে মুড়ে টিকিট লাগিয়ে ডাকঘরে পাঠিয়ে দেয়, তার পরে নিশ্চিন্তমনে স্নানাহার করে। এমন-কি, ইংরাজ রাজত্বেও কিছুদিন পূর্বে যখন ভালোরূপ রাস্তাঘাট যানবাহনাদি ও পুলিসের বন্দোবস্ত হয় নি, তখনো প্রবাস বলে একটা সত্যিকার জিনিস ছিল; তাই—
প্রবাসে যখন যায় গো সে
তারে বলি বলি আর বলা হল না!
কবিদের এ-সকল গানের মধ্যে এতটা করুণা প্রবেশ করেছিল। তুমি মনে কোরো না, আমি এতদূর নির্লজ্জ কৃতঘ্ন যে চিঠির মধ্যেই পোস্ট্ অফিসের বিরুদ্ধে নিন্দাবাদ করছি। আমি পোস্ট্-অফিসের বিশেষ পক্ষপাতী, কিন্তু সেই সঙ্গে এটাও স্বীকার করছি যে, যখন মেঘদূত বা কোনো প্রাচীন কাব্যে বিরহিণীর কথা পড়ি তখন মনের মধ্যে ইচ্ছে করে ঐরকম সত্যিকার বিরহিণী আমার জন্যে যদি কোনো প্রবাসে বিরহশয়ানে বিলীন হয়ে থাকে এবং আমি যদি জড় অথবা চেতন কোনো