বেড়ে যায় দীর্ঘ ছন্দ, লেখনী না হয় বন্ধ,
বক্তৃতার নামগন্ধ পেলে রক্ষে নেই।
ফেনা ঢোকে নাকে চোখে, প্রবল মিলের ঝোঁকে
ভেসে যাই একরোখে বুঝি দক্ষিণেই।
বাহিরেতে চেয়ে দেখি, দেবতাদুর্যোগ এ কী!
বসে বসে লিখিতে কি আর সরে মন?
আর্দ্র বায়ু বহে বেগে, গাছপালা ওঠে জেগে,
ঘনঘোর স্নিগ্ধ মেঘে আঁধার গগন।
বেলা যায়, বৃষ্টি বাড়ে, বসি আলিসার আড়ে
ভিজে কাক ডাক ছাড়ে মনের অসুখে।
রাজপথ জনহীন, শুধু পান্থ দুই তিন
ছাতার ভিতরে লীন ধায় গৃহমুখে।
বৃষ্টি-ঘেরা চারি ধার, ঘনশ্যাম অন্ধকার,
ঝুপ্ ঝুপ্ শব্দ আর ঝর ঝর পাতা।
থেকে থেকে ক্ষণে ক্ষণে গুরু গুরু গরজনে
মেঘদুত পড়ে মনে আষাঢ়ের গাথা।
পড়ে মনে বরিষার বৃন্দাবন-অভিসার
একাকিনী রাধিকার চকিতচরণ।
শ্যামল তমালতল, নীল যমুনার জল,
আর দুটি ছলছল্ নলিননয়ন।
এ ভরা বাদর-দিনে কে বাঁচিবে শ্যাম বিনে!
কাননের পথ চিনে মন যেতে চায়।
বিজন যমুনাকুলে বিকশিত নীপমূলে
কাঁদিয়া পরান বুলে বিরহব্যথায়।
পাতা:মানসী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/৭৩
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পত্র
৭১