পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/১১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মাণিক গ্রন্থাবলী

কত বেচলে, কেনা দাম ধরে কত লাভ রইল, কর নি সে হিসাব?

 মামা বলিল — তুই আমাকে দোকান করা শেখাতে আসিস নে শ্যামা!


এবার গ্রীষ্মের ছুটি হওয়ার আগে ক্লাসের ছেলেদের অনেকেই নানাস্থানে বেড়াইতে যাইবে শুনিয়া বিধানের ইচ্ছা হইয়াছিল সে-ও কোথাও যায়,— কোথায় যাইবে? কোথায় তাহার কে আছে, কার কাছে সে গিয়া কিছুদিন থাকিয়া আসিতে পারে? বনগাঁ গেলে হইত, — মন্দাকে শ্যামা চিঠি লিখিয়াছিল, মন্দা জবাব দিয়াছে, এখন সেখানে চারিদিকে বড় কলেরা হইতেছে, — এখন না গিয়া বিধান যেন পূজার সময় যায়।

 বিষ্ণুপ্রিয়ারা এবার দাৰ্জিলিং গিয়াছে। তখনও স্কুলের ছুটি হয় নাই, — শঙ্কর সঙ্গে যাইতে পারে নাই। বিষ্ণুপ্রিয়া এখানে থাকিবার সময় শঙ্কর বোধহয় সাহস পাইত না, বিষ্ণুপ্রিয়া দাৰ্জিলিং চলিয়া গেলে একদিন বিকালে সে এ বাড়িতে আসিল।

 শ্যামা বারান্দায় তরকারি কুটিতেছিল, বিধান কাছেই দেয়ালে ঠেস দিয়া বসিয়া ছেলেদের একটা ইংরাজী গল্পের বই পড়িতেছিল, মুখ তুলিয়া শঙ্করকে দেখিয়া সে আবার পড়ায় মন দিল।

 শঙ্করকে বসিতে দিয়া শ্যামা বলিল — কে এসেছে দেখি খোকা।

 বিধান শুধু বলিল — দেখেছি।

 বিধান কি আজো সে অপমান ভোলে নাই, বন্ধু বাড়ি আসিয়াছে তার সঙ্গে সে কথা বলিবে না? লাজুকে শঙ্করের মুখখানা লাল হইয়া উঠিয়াছিল, শ্যামা টান দিয়া বিধানের বই কাড়িয়া লইল, বলিল — নে, ঢের বিদ্যে হয়েছে, যা দিকি দুজনে দোতলায়, বাতাস লাগবে একটু,— যা গরম এখানে!

 বিধান আস্তে অস্তে ঘরের মধ্যে গিয়া বসিল। শ্যামা বলিল, তোমাদের ঝগড়া হয়েছে নাকি শঙ্কর?— ও বুঝি কথা বলে না তোমার সঙ্গে? কি পাগল ছেলে!— না বাবা, যেওনা তুমি, পাগলটাকে আমি ঠিক করে দিচ্ছি!

 ঘরে গিয়া শ্যামা ছেলেকে বোঝায়। বলে, যে শঙ্কৱেৱ কি দোষ? শঙ্কর তো তাদের অপমান করে নাই, যে বাড়ি বহিয়া ভাব করিতে আসে তার সঙ্গে কি এমন ব্যবহার করিতে হয়? ছিঃ! কিন্তু এ তো বোঝানোর ব্যাপার নয়, অন্ধ অভিমানকে যুক্তি দিয়া কে দমাইতে পারে? ছেলেকে শ্যামা বাহিরে টানিয়া আনে, সে মুখ গোঁজ

১১৬