পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জননী

থাকিত হীরার চমক। এখন সেসব কিছুই তাহার নাই। অলঙ্কার প্রায় সবই সে খুলিয়া ফেলিয়াছে, বিন্যস্ত কেশরাজিতে ধরিয়াছে কতগুলি ফাটল, সে কাছে থাকিলে সাবান ছাড়া আর কোনো সুগন্ধীর ইঙ্গিত মেলে না। তাও মাঝে মাঝে নিশ্বাসের দুর্গন্ধে চাপা পড়িয়া যায়।

 ঘনিষ্ঠতার বালাই না থাকিলেও মন্দা চিরকাল ঘনিষ্ঠ প্রশ্ন করিয়া থাকে।

 — সাজগোজ একেবারে ছেড়ে দিয়েছেন দেখছি।

 বিষ্ণুপ্রিয়া হাসিয়া বলে — এবার মেয়ে ওসব করবে।

 — একটি মেয়ে বিইয়েই সন্ন্যেসিনী হয়ে গেলেন?

 — একটি দুটির কথা নয় ঠাকুরঝি। নিজে ছেলেমেয়ে মানুষ করতে গেলে ও একটিই থাক আর দুটিই থাক ফিটফাট থাকা আর পোষায় না। মেয়ে এই এটা করছে, ওই ওটা করছে — নোংরামির চূড়ান্ত, তার সঙ্গে কি এসেন্স মানায়? মেয়ে একটু বড় হলে হয়তো আবার শুরু করব। তা করব ঠাকুবুঝি, এবয়সে কি আর বুড়ি হয়ে থাকব সত্যি সত্যি!

 শ্যামা বলে, মেয়ে বড় হতে হতে আর একটি আসবে যে!

 বিষ্ণুপ্রিয়া জোর দিয়া বলে — না, আর আসবে না।

 মন্দা খিলখিল করিয়া হাসে — বললেন বটে একটা হাসির কথা! এখুনি রেহাই পাবেন? আরও কত আসবে, ভগবান দিলে কারো সাধ্যি আছে ঠেকিয়ে রাখে।

 শ্যামা বলে — ঠাকুরঝি আপনাকে জব্দ করে দিলে।

 বিষ্ণুপ্রিয়া বলে — আমাকে জব্দ করা আর শক্ত কি?

 যে বিষ্ণুপ্রিয়ার এমনি পরিবর্তন হইয়াছে একদিন সকালে সে শ্যামাকে দেখিতে আসিল। মেয়েকে সে সঙ্গে অনিল না। মেয়েকে সঙ্গে করিয়া বিষ্ণুপ্রিয়া কোথাও যায় না, কারো বাড়ি মেয়েকে যাইতেও দেয় না, ঘরের কোণে লুকাইয়া রাখে। বাড়ির পুরানো ঝি ছাড়া আর কারো কোলে সে মেয়েকে যাইতে দেয় না। মেয়ের সম্বন্ধে তাহার একটা সন্দেহজনক গোপনতা আছে, পাড়ার মেয়েরা এমনি একটা আভাস পাইয়া কৌতুহলী হইয়া উঠিয়াছিল। তারপর সকলেই জানিয়াছে। জানিয়াছে যে বিষ্ণুপ্রিয়ার মেয়ে পৃথিবীতে আসিয়াছে পাপের ছাপ লইয়া, মহিম তালুকদার ভীষণ পাপী।

 এবার বিষ্ণুপ্রিয়াকে কার্পেটের আসনটাতেই বসিতে দেওয়া হইল। মন্দা

৩৯