পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৫৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাণিক গ্ৰন্থাবলী অভ্যন্ত বুলি আওড়াইয়া কাতরভাবেই সে এখনো ভিক্ষা চায়। কিন্তু ভিক্ষা না পাইলে তাহার ক্রোধের সীমা থাকে না। পথে লোকজন না থাকিলে তাহার প্ৰতি উদাসীন পথিককে সে অশ্লীল গাল দিয়া বসে। এক পয়সার জিনিস কিনিয়া ফাউ না পাইলে দোকানীকে মারিতে উঠে। নদীর ঘাটে মেয়ের স্বান করিতে নামিলে ভিক্ষার চাহিবার ছলে জলের ধারে গিয়া দাড়ায় । ভয় পাইলে সে খুসি হয় এবং সরিয়া যাইতে বলিলে নড়ে না, দাঁত বাহির করিয়া দুবিনীত হাসি হাসে। রাত্রে স্বরচিত শয্যায়। সে ছটফট করে । নারী সঙ্গ-হীন এই নিরুৎসব জীবন আর তাহার ভাল লাগে না । অতীতের উদাম ঘটনাবহুল জীবনটির জন্য তাহার মন হাহাকার করে। তাড়ির দোকানে ভাড়ে ভাড়ে তাড়ি গিলিয়া সে হল্লা করিত, টলিতে টলিতে বাসির ঘরে গয়া উন্মত্ত রাত্রি যাপন করিত, আর মাঝে মাঝে দল বাধিয়া গভীর রাত্রে গৃহস্থের বাড়ী চড়াও হইয়া সকলকে মারিয়া কাটিয়া টাকা ও গহনা লুটিয়া রাতারাতি উধাও হইয়া যাইত। স্ত্রীর চোখের সামনে স্বামীকে বাধিয়া মারিলে তাহার মুখে যে অবর্ণনীয় ভােব দেখা দিত, পুত্রের অঙ্গ হইতে ফিনকি দিয়া রক্ত ছুটলে মা যেমন করিয়া আৰ্ত্তনাদ করিয়া উঠিত, মশালের আলোয় সে দৃশ্য দেখা আর সেই আৰ্ত্তনাদ শোনার চেয়ে উন্মাদনাকার নেশা জগতে আর কি আছে ? পুলিশের ভয়ে গ্ৰাম হইতে গ্রামান্তরে পলাইয়া বেড়াইয়া আর বনে জঙ্গলে লুকাইয়া থাকিয়াও যেন তখন সুখী ছিল। তাহার দলের অনেকেই বার বার ধরা পড়িয়া জেল খাটিয়াছে কিন্তু জীবনে একবারের বেশী পুলিশ তাহার নাগাল পায় নাই। রাখু বাগদীর সঙ্গে পাহানার শ্ৰীপতি বিশ্বাসের বোনটাকে যোবার সে চুরি করিয়াছিল। সেইবার সাতবছরের জন্য তাহার কয়েদ হইয়াছিল, কিন্তু দু’বছরের বেশী কেহ তাহাকে জেলে আটকাইয়া রাখিতে পারে নাই। এক বর্ষার সন্ধ্যায় জেলের প্রাচীর ডিঙ্গাইয়া সে পলাইয়াছিল। তারপর একা সে গৃহস্থবাড়ীতে ঘরের বেড়া কাটিয়া চুরি করিয়াছে, দিনে দুপুরে পুকুর-ঘাটে একাকিনী গৃহস্থ বধুর মুখ চাপিয়া গলার হার, হাতের বালা খুলিয়া লইয়াছে, রাখুৱ বোঁকে সঙ্গে নিয়া নোয়াখালি হইয়া সমুদ্রডিঙ্গাইয়া পাড়ি দিয়াছে একেবারে হাতিয়ায়। ছ'মাস পরে রাখুৱ বোঁকে R (29