পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চিহ্ন S y A চাষাভুষো সব একজোট হয়ে, বড় হাকিম নিজে এসে ব্যবস্থা করার কথা না দিলে কাণ্ডই হয়ে যেত একটা । কাণ্ড হল শেষতক, তার মেয়েকে নিয়ে। পদীর মেয়ের দিকে ছিল সবাই, প্ৰাণ দিয়ে মায়া করেছে, তাকে সবাই, সে নিজেও কি একদিন কেঁদে ফেলেনি। তাকে বুকে জড়িয়ে দুটাে কথা কইতে গিয়ে ? তবু তো পুকুরে ডুবে মরল পদীর মেয়েটা । গায়ে থাকতে হলে রাণীই বা কি করে বসত কে জানে ! তার চেয়ে এ ভাল হয়েছে। ভাঙা ঘর আর ভিটেটুকু বাধা পড়ে আছে, ঋণের বোঝা জমে আছে পাহাড় হয়ে । কি হবে এ ভিটের মায়া করে ? তার চেয়ে শহরে অচেনা লোকের মধ্যে রাণীও বঁচিবে শান্ত মনে, তারাও থাকবে সুখে শান্তিতে । গণেশের মারা সুখশান্তির স্বপ্নও খোলা আর খোসা দিয়ে গড় । তার বেশী চাইতে ভুলেও গেছে, সাহসও হয় না। না খেতে পেয়ে একেবারে না মরলে, রোগে বিপাকে মরণাপন্ন না হলে, মাথা গুজবার ঠাইএর অভাব না ঘটলে তার কত শান্তি কত সুখ লাভ হত। কেশব একটি পুরানো কম্বল হাতে করে ঘরে আসে, ঘরে তৈরী বাল্যাপোশ গায়ে জডিয়ে। বয়স প্রায় পঞ্চাশ হবে, শীর্ণ মুখে খোচা গোঁপদাডি। সহজ শান্ত ভাব, একটু গাম্ভীর্যপূর্ণ। মাঝরাত্রে হঠাৎ এই খাপছাড়া অতিথি পরিবারটির আবির্ভাবে তাকে কিছুমাত্র ব্যস্ত বা বিপন্ন মনে হয় না। খিচুড়িটা নামবে এবার, কম্বলটা যাদবের কাছে নামিয়ে রেখে সে ঘরোয়া সুরে বলে, খেয়ে নিয়ে একটু বিশ্রাম করেই রওনা দিতে হবে। নৌকোয় ঘুমানো চলবে। নৌকো খুঁজতে গেছে। “মোর তরে সবার বিপদ হল, পালাতে কেমন লাগছে বন্তি মশায় ।” কেশব মাথা নেড়ে যেন তার এই অনুভূতির সঙ্গতিতেই সায় দেয়, বলে, ‘পালাচ্ছে না তো, পালাবে কেন । ওরা তো ছেড়ে কথা কইবে না, কদিন তাণ্ডব চলবে চাদিকে । তোমাদের ওপর ঝাল বেশী, প্ৰথম ধাক্কাটা পড়বে তোমাদের ওপরে । তোমরা তাই কটা দিন নিরাপদ জাগায় গিয়ে থাকবে । অবস্থা ভাল হলে, দেশের লোক প্ৰতিবাদ শুরু করলে অতটা যা তা করা চলবে না, যখন আইনসঙ্গত এনকোয়ারী শুরু হবে, কেশবের মুখে মৃদু হাসি দেখা দেয় ক্ষণিকের জন্য, “তখন তোমরা ফিরে আসবে সাক্ষী দিতে। তোমার মেয়ে আমাদের তরফের বড় সাক্ষী ।” ‘সাক্ষী দিতে হবে ? দেব। আমি সাক্ষী দেব।” রাণী এতক্ষণে জানালা ছেড়ে সরে আসে। . কেশব নীরবে মাথা হেলিয়ে সায় দেয় ।