পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

fiss Σ. Σο তাদের খাওয়া শেষ হবার আগেই নৌকার খোজে ষে দু’জন গিয়েছিল তারা ফিরে আসে । আধা ঘণ্টার মধ্যে তাদের নিয়ে নৌকা ছেড়ে দেয়। কারো বারণ না শুনে রাণী ছাইএর বাইরে বসে চেয়ে থাকে, আগুনের রক্তিম আভার দিকে। মধুখালি অতিক্রম করেই নৌকা যাবে। মরেই যে গেছে, বিশেষ করে যাকে স্পষ্টই চেনা যায় কুলি বা চাকর বলে, তার জন্য হাসপাতালের লোক বেশী আর মাথা ঘামাতে চায় না । মরণের খবর জানিবার প্রয়োজন যেন কিছু কম তার আপনজনের, প্ৰাণহীন শরীরটা যেন কিছু কম মূল্যবান তাদের কাছে। বাঁচাবার চেষ্টা সাঙ্গ হবার সঙ্গে অবশ্য প্রধান কর্তব্য শেষ হয়ে যায় হাসপাতালে। জীবিতের দাবিই তখন বড় । ওসমান তা জানে। আচমকা বহু সংখ্যক আহত ও মরণাপন্নদের আবির্ভাবে সকলে খুব ব্যতিব্যস্তও বটে। তবু, চাটমোড়া মালটা খুলে মৃত লোকটির নাম ঠিকানা জানিবার কোন উপায় মেলে। কিনা এটুকু চেষ্টা করে দেখবার অবসর কি কারো নেই ? কোন একটা হদিস পেলে আজ রাত্ৰেই খোজ নিতে যাবার জন্য সে তো রাজী ছিল, যত রাস্ত হঁটিতে হয়। হাটবে। কিন্তু কালকের জন্য ও কাজটা স্থগিত রাখা হয়েছে। মিছামিছি হাঙ্গামা করে লাভ নেই আজ । সকলে বড় ব্যস্ত । গণেশের কুর্তার পকেটে এক টুকরো কাগজে পেন্সিল দিয়ে ইংরেজীতে লেখা একটা ঠিকানা পাওয়া গিয়েছিল। জেমস স্ত্রীটের একজন এল, ক্যামারণের ঠিকানা। অনেক বলে বলে ওখানে ওসমান একটা টেলিফোন করাতে পেরেছিল। ক্যামারণ কিছুই জানে না । বর্ণিত মৃতদেহ তার কোন জানা লোকের নয়। না, মালের সে অর্ডার দেয় নি, কোন মাল তার কাছে পৌছবার কথা ছিল না। আর দাড়িয়ে থেকে লাভ নেই, অনেক রাত হয়ে গেছে। কাল একবার এসে খবর নিয়ে যাবে। এক আত্মীয়কে মৃত দেখে, অজানা রেখে যেতে হচ্ছে মনে হয় ওসমানের। হাসপাতালে আসবার সময়ও ভেতরে ক্ষীণ একটু প্ৰাণ ছিল ছেলেটার, বাইরে যার কোন লক্ষণ ছিল না। খানিক পরেই জীবন শেষ হয়ে যায়, নিঃশব্দে, চুপিচুপি। ওর আসল আশ্চৰ্য মরণ ঘটেছিল রাস্তায় তার কাছে, মাথায় গুলি লাগার পরেও দাড়িয়ে থেকে, কথা বলে, হঠাৎ দ্রুত গতিতে নিজীব নিঝুম হয়ে ঢলে পড়ে। একটি কাতরানির শব্দ বার হয়নি মুখ দিয়ে। একটি লক্ষণ প্ৰকাশ পায়নি মারাত্মক আঘাত লাগার, অসহিষ্ণু উদ্বেগের