পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

p মানিক গ্ৰন্থাবলী অভাবটা চিরস্থায়ী দায়, কোন বছর বাদ যায় না । বীজধান তুলে রাখে, আশা করে এবার হয়তো হাত না দিয়েই চালানো যাবে খেটে খুটে পয়সা কমিয়ে ভগবানের দয়ায়। বীজ যে লক্ষ্মী সবাই জানে, একমুঠে ছড়িয়ে দিলে ফিরে আসে দশ মুঠো হয়ে । কিন্তু প্ৰতি বছর। পেটের জালায় শেষ शुष्ठां}ि ठङाष्ट्र श्श, - যদিও পেট তখনো জলে। খুজে পেতে কেঁদে কেটে বীজ যোগাড় হয়, অবিশ্বাস্য চড়া ধানের সুদে। এবার এই স্বাভাবিক অভাব নয়, ফদে পড়া সর্বজনের সাৰ্বজনীর অভাব । চাষীরা সব চিরকালই চাষী, চাষাড়ে জ্ঞান, চাষাড়ে মতিগতি । ধানের দাম এমন চড়ে গেল যে দাদা, বাপ আর নিজের এই তিন পুৰুষে তেমন শুধু স্বপন দেখা ছিল। ধানের এমন দাম চড়া মানেই চাষীর লক্ষ্মী বাড়া – চার্দীর ; জানে এ ছাড়া আর অন্য নিয়ম নেই, অন্যথাও নেই । সোজা হিসাব, সোজা নিয়ম, প্যাচ থাকবে কোথায় ? তিনের দরে একমণ বেচে তিন টাকা পাই, সাতের দরে একমণ বেচে পাই সাত টাকা । চারটে নগদ টাকা, কডকডে চারটে নতুন ছাপা নোট যে বেশী পাই তাতে কি আরও সন্দেহ আছে ভাই ? হরোনাম রাইস মিলের নীলকণ্ঠবাবু, ভাদুরী রাইস মিলের জলধরবাবু আর মডার্ণ রাইস মিলের বিনোদবাবু তিনজনেই দর বাডায়, কিন্তু তাদের চেয়ে চড়া দর দেয় অজানা অচেনা বিদেশী ক’জন লোক ! মানুষ তারা অচেনা বটে। কিন্তু তাদের টাকা গুলি চেনা | ধান নিয়ে তারা পালিয়ে যায় না, গাড়ী বােঝাই দিয়ে রাইস মিলেই ধান নিয়ে ফেলে। খালি মধুবাণীর তিনটে মিলে নয়, সাত ক্রোশ দূরে গোদাপাডার মিলে পর্যন্ত যায়। গোদাপাড়া জায়গা ছোট, মিলিটা কিন্তু মস্ত আর একেবারে রেল লাইনের ধাৰে । উধ্বশ্বাসে কল চালাতে শুরু করে তিনটি মিলের তিনটি বাবুই যেন ধান কিনতে উদাস ভাব দেখায়। যেমন তেমন ছাটা ধুলো কঁকার মেশাল দেয়া চালগুলি প্ৰায় চালান হয়ে এলে, মিলের কাজে কমবেশী ক্ষান্তি পডে গেলে, তিনটি दांबूझे द्र কমিয়ে ধানের দাবী জানায়, পাওনা ধান, ঋণের ধান, ছাটাই করে চাল ফিরিয়ে দেবার ধান । দাদন যারা দিয়েছিল তারা অনেকে চেয়ে চেয়ে পুরানো দরে ধান পায়নি, টাকার গরম চাষীর তখন মগজ ছুয়েছে। বলে দিয়েছে, সুদে আসলে টাকা ফেরত নাও, ও দরে আর ধান পাবেনি। কিন্তু দাদন নিয়ে কি চাষী রেহাই পায় ? দাদনদার চেপে ধরে ভয় দেখিয়েছে যে দাদন ঋণ নয়, গচ্ছিত ধান বেচে দেওয়া