পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চিহ্ন SVS' “সেটা কঠিন বটে তোমার পক্ষে বলা,’ হেমন্ত স্বীকার করে নেয়, এক কাজ কর। তবে । হা না কিছুই তুমি বোলো না। আমার ওপরে সব ছেড়ে দাও, আমি যা ভাল বুঝব করব। তাই কর মা ।” অনুরূপ নিশ্বাস ফেলেন। - “এ আমি আগেই জানতাম হেমা, তোর সঙ্গে পারব না ।” এই ভাবে একটা বােঝা-পড়ার মধ্যে মা ও ছেলের সংঘর্ষটা বেঁচে রইল। মার অনুমতি মানেই আশীৰ্বাদ । সেটা জুটলো না হেমন্তের। তবে নিষেধের অভিশাপ যে এল না, অনুরূপার মতো ভদ্র স্নেহাতুর মায়ের এ পরিবর্তন কে অস্বীকার করবে ? কে বুঝতে পারবে না যে, অনুরূপার পক্ষেই সম্প্রতি সন্তানকে আশীৰ্বাদ দেওয়া সম্ভব হবে, আচ্ছা মরবে যাও, এর চেয়ে মহান মৃত্যু মা হয়ে কি করে কমান করি তোমার জন্য । “হােতটা গেছে ? জীবনে আর সারবে না ? আমিনার আর্তনাদ যেন চিরে। দেয় ঠাণ্ড মাঝরাত্ৰি । “একটা হাত তো আছে।” রসুল বলে জোর দিয়ে । “তা আছে ।” আমিন আত্মসংবরণ করেন আর্ত-চীৎকারে ফেটে পড়বার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে । মাঝরাত্রে এভাবে হঠাৎ ব্যাণ্ডেজ বাধা গলায় ঝুলানো নষ্ট হাত নিয়ে রক্তমাখা জামা-কাপড় পর। ছেলে হাজির হলে কোন মা আত্মহারা না হয়ে পারে ? তবে নিজেকে সামলাবার ক্ষমতা আমিনার অদ্ভুত। ছেলেটা আজাদির জন্য অনায়াসে মরতে পারে, মরবার জন্য তৈরী হয়ে আছে, টের পাবার পর থেকে আমিনার মনের এই জোরটা হু-হু করে বেড়ে গেছে। “আব্দর খেতে এলাম, আমায় মোটে আদর করছ না মা !” “তোর মা হওয়া যা ঝকমারি, আদর করতে মোটে ইচ্ছে যায় না রসুল ।” রসুলের মাথাটা আরও জোরে বুকে চেপে ধরে আমিনা বলেন, ‘হাসপাতালে গেছিস জেনে নিশ্চিন্ত হয়েছিলাম। জানি তো এমনি ভাবে যাবি একদিন, দু'দিন আগে আর পরে। আগে গেলেই বরং চুকে-বুকে যায় সব। তোকে পুড়তে হয় না। চব্বিশ ঘণ্টা মনে মনে, আমাকেও পুড়তে হয় না চব্বিশ ঘণ্টা তোর কথা ভেবে তেবে - * “মা, জানো ? ফিস ফিস করে রসুল বলে । তেমনি ফিসফিস করে আমিনা বলেন, “কি ?