পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চিহ্ন N) VO হয়। দোকানের একটা চাকরি, তার জন্য কে মাথা ঘামায় ? “আপনার কি বুদ্ধি বাবু!” চন্দ্ৰ সবিনয়ে বলে। শিয়ালদ’র কাছে বস্তির ঘরে ভোরে ঘুম ভাঙে ওসমানের। তার আগে অনেক কারা জেগেছে, কথা বলছে। অনেকের কথার সমগ্র আওয়াজটাই কানে লাগে প্ৰথম, চেতনায় সে আওয়াজ শব্দ হয়ে ওঠে। গণেশের সেই কথা : ওরা এগোবে না ? শদিত চেতনা হয়েই যেন ছিল প্রশ্নটা তার মনেরও মধ্যে, জেগে উঠে। মনে পড়ার বদলে যেন জাগরণটাই পরে এল । শূন্য ঘরে ঘুম ভেঙে গণেশের ওই প্রশ্নটা মনের ধ্বনির মতো শোনার সঙ্গে যেন জড়িয়ে আছে দেশের বাড়িতে বৌ ছেলে মেয়ের ভাবনা, তারা কেমন আছে। এই জিজ্ঞাসা । কাজে আজি সে যাবে না। যাওয়া ਬੋਝਿਚ হবে না। তারও নয়, কারও নয়। এক অফুরন্ত বিশ্বাস ও দৃঢ়তা অনুভব করে ওসমান, সবাই যখন এক হয়ে গেছে এগোবার প্ৰতিজ্ঞায়, নির্দেশ দিতে হয়নি নেতাদের, এমন অকারণ অর্থহীন অত্যাচারের প্ৰতিবাদও সবাই করবে এক হয়ে, কাউকে বলে দিতে হবে না। এ সিদ্ধান্তের একটা অদ্ভুত সমর্থন অনুভব করে ওসমান, শুধু তার ভিতরের বিশ্বাসে নয়, বাইরে থেকেও যেন বহু লোকের সমর্থন সে স্পষ্ট টের পাচ্ছে। প্ৰথমে বুঝে উঠতে পারে না। ঘরের বাইরে গিয়ে বস্তির বহু কণ্ঠের কলরব কানে এলে তখন সে বুঝতে পারে। রাত্রি শেষেই বস্তি প্ৰায় খালি করে যারা কাজে চলে যায়, তারা এখনো কেউ যায়নি। তার মানেই কাজে তারা আজ যাবে না, কাজে যেতে হলে ভোরের আলোয় বস্তিতে বসে উত্তেজিত আলোচনার বৈঠক বসানো চলে না। তার উঠতে দেরি হলে রহমান সিদিক গোলামের কেউ বেরোবার সময় তাকে ডেকে দিয়ে যায়, আজ ভোর পর্যন্ত কেউ তাকে ডেকে তোলেনি কেন এতক্ষণে ওসমান বুঝতে পারে। নিজেরা যখন তার কাজে যাবে না, ওসমান অবশ্যই যাবে না, এটা তারা নিজেরাই ধরে নিয়েছে। সুতরাং কাজ কি অনর্থক ঘুমন্ত মানুষটাকে ডেকে তুলে। তার কারখানার লোকেদের একতা গড়ে উঠতে উঠতে বার বার ভেঙে যাচ্ছে নানা শয়তানী কারসাজিতে। ট্রামের কাজে ইস্তফা দিয়ে এখানে কাজ নিতে হওয়ায় মনে তার একটা অভাব বোধ জেগে ছিল । সব সময় মনের মধ্যে সে গভীর ঔৎসুক্য অনুভব করে ভেদহীন বৃহৎ এক সংগঠনের একজন হয়ে থাকতে । এই কারখানায় সে সাধ তার যেন কিছুতেই মিটছে না।