পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Se মানিক গ্ৰন্থাবলী পারছি জানো ? দেশ কাকে বলে তাই আমি জানতাম না দু’বছর আগে, এই ভীষণ সত্যটা । অথচ কি প্ৰচণ্ড অহঙ্কার ছিল দেশকে ভালবাসি বলে |’ চায়ের কাপ মুখে তুলে চুমুক দিতে গিয়ে হেমন্ত চেয়ে থাকে সীতার মুখের দিকে। নিজের ভুল আবিষ্কার করতে পারার জন্য সীতা কৃতাৰ্থ, কৃতজ্ঞ। যে বিশ্বাস মুখে এমন দীপ্তি, চােখে এমন উজ্জ্বল স্বচ্ছন্দ দৃষ্টি এনে দিতে পারে, সরল ও নম্রও বুঝি মানুষ হয়। সেই বিশ্বাসের জোরেই। সীতাকে নিয়ে বহু দিনের বহু ঈর্ষা ক্ষোভ হতাশার অভিজ্ঞতা তো মুছে যায়নি হেমন্তের হৃদয় থেকে আজ এখানে আসবার সময়েও, এত ঘনিষ্ঠ হয়েও সীতাকে ভাল করে চিনতে না পারার জালাটাই বুঝি তার ছিল বেশী—সীতাই যেন নানা কলা কৌশলে ওই দুর্বোধ্যতার ব্যবধান সৃষ্টি করে নিজেকে তার নাগালের বাইরে রেখে দিয়েছিল, দূরে যে সরিয়ে রাখা হয়েছে এটুকু জানতে বুঝতে দেবার দয়াটুকুও দেখায়নি। হৃদয়ে অনেক কঁাটার অনেক ক্ষতে আজ যেন প্ৰলেপ পড়ে হেমন্তর । নিজেকে তার ছোট ভাবতে হয়, কিন্তু সেজন্য তার খুব বেশী দুঃখ বা ক্ষোভ হয় না । বরং তৃপ্তির সঙ্গে, কৃতজ্ঞতার সঙ্গেই সে এ জ্ঞানকে মেনে নেয় যে, নিজের ছোটমি দিয়েই সে পার্থক্য রচনা করেছিল তাদের মধ্যে, সীতা তাকে ঠেকিয়ে রাখেনি। কৃত্ৰিম আকর্ষণও সীতা সৃষ্টি করেনি তার জন্য, কৃত্রিম রহস্যের আবরণেও নিজেকে ঘিরে রাখেনি। সেই তার ছোট মাপকাঠিতে সীতাকে মাপতে গিয়ে, তার গরীবের মূল্য বিচার দিয়ে দাম ঠিক করতে গিয়ে বিভ্রান্ত হয়ে গেছে, দুঃখ পেয়েছে। সীতার যে একটা সহজ স্বাভাবিক সরলতার গুণ আছে, তার পুরো দাম দিতে পর্যন্ত সে তো কোন দিন রাজী হয়নি। সীতার যা আছে সে তা মেনে নিতে পারেনি, কেটে-ছেটে কমিয়ে নিয়েছে নিজের প্রয়োজনে, তার নিজের অল্পতার সঙ্গে, দৈন্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে। যতই হোক, সীতা তো মেয়ে ! “কি ভাবছো ? চা-টা খেয়ে নাও।” একটু ইতস্তত করে সীতা, যেচে সহজ সরল হতে গিয়ে সেটা অনর্থক হলে বড় বিশ্ৰী লাগে। নিজের চা সে শেষ করে। ভূমিকা যা করবে ভেবেছিল সেটা বাদ দিয়ে সোজাসুজি জিজ্ঞাসা করে, “মাসীমা কি ভাবে নিলেন ?? ‘কাল রাত্রে ভাল ভাবেই নিয়েছিলেন । সকালে যেন কেমন দেখলাম। “মার মনে একটা খটকা লেগেছে - খটকা কেন বলি, মার খুব হিংসা হয়েছে।” ‘জানি।” সীতা চোখ তোলে, “কাল তোমায় খুঁজতে এসেছিলেন, বলেই ফেলেছেন আমার কাছে। তোমায় নাকি পুতুল করে ফেলেছি আমি, খুলীমতো